বিশেষ সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ, বিজেপি কার্যালয়ে ভাঙচুর, কারফিউ জারি...
আজকাল | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: লাদাখের লেহ শহরে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে পথে নামা হাজার হাজার মানুষ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এদিন বিক্ষুব্ধ জনতা লাদাখে বিজেপির আঞ্চলিক কার্যালয় ভাঙচুর করে এবং একটি পুলিশ ভ্যান অগ্নিদগ্ধ করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসন লেহ শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে।
চোখের দেখা সাক্ষীদের বরাতে জানা যায়, সকালে লাদাখ অটোনোমাস হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (LAHDC) ভবনের সামনে ছত্রভঙ্গ এক বিক্ষোভ দ্রুত তীব্র রূপ নেয়। মুহূর্তের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। প্রবীণ, যুবক এমনকি শিশুদেরও অংশগ্রহণে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে ব্যাপক পাথর ছোঁড়েন। একপর্যায়ে একটি পুলিশ ভ্যান ঘিরে ধরে বিক্ষোভকারীরা আগুন ধরিয়ে দেন। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশ টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। তবে আহতের সংখ্যা বা ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য এখনও মেলেনি।
বিক্ষুব্ধ জনতা লেহ-তে অবস্থিত বিজেপির তিনতলা আঞ্চলিক কার্যালয় ঘিরে ধরে ভাঙচুর চালায়। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, এক তরুণ বিজেপির পতাকা খুলে মাটিতে ফেলে দেন, তবে ত্রিবর্ণ জাতীয় পতাকা অক্ষত রেখেছেন। বিজেপি নেতারা অল্পের জন্য রক্ষা পান বলে জানা গেছে।
২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর ভেঙে আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে গঠিত হওয়ার পর থেকেই লাদাখবাসীর মধ্যে অসন্তোষ জমছিল। ভূমি, চাকরি ও সাংবিধানিক সুরক্ষার প্রশ্নে কেন্দ্রের প্রতি ক্ষোভ ধীরে ধীরে আকার নিচ্ছিল। বিজেপি ২০২০ সালে লাহডিসি নির্বাচনে ২৬টির মধ্যে ১৫টি আসনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। তবে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে ক্ষোভ আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
পরিচিত জলবায়ু কর্মী ও শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুক গত ১৫ দিন ধরে লেহ-র এনডিএস ময়দানে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে অনশনে বসা দুই আন্দোলনকারী মঙ্গলবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই উত্তেজনা তীব্র হয়। এর প্রতিবাদে বুধবার লাদাখজুড়ে শাটডাউন পালিত হয়।
এক ভিডিও বার্তায় ওয়াংচুক বলেন, “এটি এক সামাজিক অস্থিরতার রূপ নিয়েছে। পাঁচ বছর ধরে যুবকরা বেকার। একের পর এক অজুহাত দেখিয়ে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটি সামাজিক বিস্ফোরণের রেসিপি। তবে আমি হিংসার নিন্দা জানাচ্ছি।” কার্গিলভিত্তিক আন্দোলনকারী সাজ্জাদ হুসেন এক্স-এ লিখেছেন: “যা ঘটছে তা দুর্ভাগ্যজনক। একসময়ের শান্তিপূর্ণ লাদাখ এখন কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে সরকারের ব্যর্থ পরীক্ষার কারণে হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতায় জর্জরিত। সরকারকে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করতে হবে এবং ষষ্ঠ তফসিল ও পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে।” অশান্তির জেরে প্রশাসন লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবিন্দর গুপ্তর কার্গিল সফর বাতিল করেছে। এছাড়া আসন্ন লাদাখ উৎসবও “নিরাপত্তাজনিত কারণে” বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে, কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স ও লেহ এপেক্স বডি বৃহস্পতিবার লাদাখজুড়ে পূর্ণাঙ্গ বন্ধের ডাক দিয়েছে। দুই সংগঠনই দাবি করেছে, ৬ অক্টোবর নির্ধারিত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির বৈঠক এগিয়ে এনে অবিলম্বে আলোচনার সূচনা করতে হবে, বিশেষত অনশনরতদের শারীরিক অবস্থার অবনতির কথা বিবেচনায় রেখে। ২০১৯ সালে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণার পর থেকে যে অসন্তোষ ধীরে ধীরে জমছিল, তা বুধবার রাস্তায় বিস্ফোরিত হলো। বিশেষ সাংবিধানিক সুরক্ষা, ভূমি ও চাকরির নিশ্চয়তার দাবিতে উত্তাল লাদাখে বর্তমানে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দুই ক্ষেত্রেই চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।