সাগরপার থেকে কলকাতার ময়দান, জেদি মেয়ের জন্য দ্বীপের মহিলাদের মধ্যে বেড়েছে ফুটবলে উৎসাহ ...
আজকাল | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: অনেকেই তাঁকে বলত, মেয়ে হয়ে আবার ফুটবল খেলা কেন! তারা তো ঘরকন্না করে! কিন্তু কে বুঝবে গোলাকার ওই বলটাকে দেখলেই তাঁর ভালোবাসতে ইচ্ছা করে। ফলে নানা কথা বলেও তাঁকে সরিয়ে আনা যায়নি মাঠ থেকে। হ্যাঁ, তাঁর পরিশ্রমের জন্য অবশেষে সৌভাগ্যলক্ষী তাঁর দিকে তাকিয়েছেন। সেজন্যই গঙ্গাসাগরের দ্বীপ থেকে আজ সন্ধ্যা মাইতি ইস্টবেঙ্গল মহিলা ফুটবল দলের একজন নির্ভরযোগ্য সদস্য।
আর পাঁচজনের মতো সন্ধ্যাও মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে ছেলেবেলায় খেলা দেখতেন। এরপর একদিন মাঠে নেমে পড়েন। ব্যাস, আর মাঠ থেকে ফিরতে পারেননি। কিন্তু এর জন্য তাঁকে কম টিকা টিপ্পনী শুনতে হয়নি। 'মেয়ে হয়ে আবার ফুটবল খেলা কীসের' ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু যত এই ধরনের কথা তাঁর কানে এসেছে ততই জেদ বেড়েছে তাঁর। তিন কাঠিটা লক্ষ্য করে একের পর এক শট মেরে গিয়েছেন তিনি। বল যে তাঁকে গোলপোস্ট ঢোকাতেই হবে। অদম্য জেদ আর অক্লান্ত পরিশ্রমে সফল হয়েছেন তিনি। দ্বীপের মাঠ থেকে পৌঁছে গিয়েছেন কলকাতার মাঠে।
সম্প্রতি ইন্ডিয়ান উইমেন্স লিগ এবং কন্যাশ্রী কাপে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের হয়ে তাঁর খেলা রীতিমতো নজর কেড়েছে সকলের। সন্ধ্যার বাবা সুশান্ত মাইতি পেশায় একজন ছোট ব্যবসায়ী। বাড়িতেই তিনি ব্যবসার কাজ করেন। মেয়ের এই সাফল্যে যথেষ্ট খুশি। তিনি বলেন, 'আমরা সবসময় চাই সন্ধ্যা আরও বড় জায়গায় পৌঁছে যাক। আগে এই এলাকায় মহিলাদের ফুটবল খেলা সেভাবে কেউ দেখতেন না। মেয়ের এই সাফল্যের পর এখন মহিলাদের খেলা লোকে আগ্রহভরে দেখছেন। সন্ধ্যার জন্য যেমন আমরা খুশি তেমনি সাগরদ্বীপের বাসিন্দারাও খুশি। আমরা চাই এই এলাকা থেকে সন্ধ্যার মতো আরও অনেক ফুটবলার তৈরি হোক।' সন্ধ্যার মা পার্বতী মাইতি বলেন, 'মামার হাত ধরে ফুটবলের মাঠে গিয়েছিল সন্ধ্যা। সেখান থেকেই এই খেলার প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মায়। প্রথম প্রথম এলাকার লোকজন বলত ফুটবল খেলতে গিয়ে যদি হাত-পা ভেঙে যায় তবে বিয়ে হবে না। কিন্তু যখন সন্ধ্যা জেলা থেকে রাজ্যস্তরে পৌঁছে গেল তখন এলাকার বাসিন্দারাই তাঁকে বাহবা দিতে এবং পাশে থাকা শুরু করল। আমরা খুব খুশি।'
আর সন্ধ্যা কী বলছেন? তাঁর কথায়, 'প্রথম যখন আমি ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলা শুরু করলাম তখন এলাকার বাসিন্দারা অনেকেই অনেক কথা বলেছিলেন। কিন্তু যখন সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে একটু একটু করে চড়তে শুরু করি তখন তাঁরাই পাশে থেকে আমায় উৎসাহ জুগিয়েছেন। আমি চাই এই সাগরদ্বীপের আরও অনেক মহিলা এই খেলাকে ভালোবেসে ফুটবলার হয়ে উঠুক এবং দেশের নাম উজ্জ্বল করুক।' আজ সাগরদ্বীপে সান্ধ্যকালীন আড্ডায় সন্ধ্যার নাম নিয়ে লোকে গর্ব করে আলোচনায় মেতে ওঠেন।