• রাজ্যের দাবিতে অগ্নিগর্ভ লাদাখ, মৃত ৪! বিজেপির দফতরে আগুন, জারি কার্ফু
    বর্তমান | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ফিরদৌস হাসান, শ্রীনগর: রাজ্যের মর্যাদা ও সাংবিধানিক রক্ষাকবচ। এই দুই দাবি ঘিরে উত্তাল লাদাখ। বুধবার সকাল থেকে যুব সম্প্রদায়ের আন্দোলন ঘিরে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল পরিস্থিতি। দফায় দফায় সংঘর্ষ, পুলিস-আধা সেনার গাড়ি ও বিজেপির পার্টি অফিসে আগুন, মৃত্যু—এসবই ছিল দিনভর অশান্তির খণ্ডচিত্র। বিক্ষোভ মোকাবিলায় লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাসও। সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত চারজন। গুরুতর জখম ৭০ জনেরও বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জারি হয়েছে কার্ফু। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে অনশনে বসেছিলেন পরিবেশ কর্মী সোনাম ওয়াংচুক। হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পর অনশন প্রত্যাহার করেন তিনি। তিনি হিংসা বন্ধের আর্জি জানান। সোনাম বলেন, ‘এধরনের কার্যকলাপ আমাদের আমাদের দাবি আদায়ের পক্ষে ক্ষতিকর। সার্বিকভাবে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। দেশ ও লাদাখে অস্থিরতা চাই না।’ যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিবৃতিতে  হিংসার  জন্য সোনমকেই দায়ী করা হয়েছে। অভিযোগ, তাঁর উস্কানিমূলক বক্তব্যেই উত্তেজিত জনতা পার্টি অফিস ও সরকারি দফতরে হামলা চালায়। কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন লাদাখের লেফটেন্যান্ট গভর্নর কবিন্দার গুপ্তা। তিনি জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরেই উস্কানি দেওয়া হচ্ছিল। এদিন সিআরপিএফের গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। ডিজির গাড়িতেও পাথর ছোড়া হয়। বাইরের কারও ইন্ধন ছিল কি না, তা জানতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

    এদিনের ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে হিংসার নেপথ্যে রাহুল গান্ধীর ‘জেন-জি’ নেতাদের দিকে আঙুল তুলেছেন। আপার লে ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলারের ছবি প্রকাশ করে বিজেপি নেতা অমিত মালব্যর দাবি, এই ব্যক্তিই হিংসা ছড়িয়েছেন। এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন সোনাম। তিনি বলেছেন,  এখানে এমন সাংগঠনিক ক্ষমতা কংগ্রেসের নেই। দীর্ঘদিন ধরেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছে। কিন্তু, তাতে কোনও ফল না মেলায় যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। 

    সোনামের অনশন চলাকালে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দু’জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তারপরই বুধবার সকালে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয় লে অ্যাপেক্স বডি (এলএবি)-র যুব শাখা। এনডিএস মেমোরিয়াল গ্রাউন্ড থেকে বিক্ষোভকারীদের মিছিল শুরু হয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, আন্দোলনকারীদের একটি অংশ বিজেপির অফিস, হিল কাউন্সিলের সদর দপ্তর লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পাল্টা পুলিশ ও আধা সেনার গাড়ি সহ বেশ কিছু যানবাহনে আগুন লাগিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। বিজেপির অফিসেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় কাউন্সিলের সচিবালয়েও। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গেও দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। বেশ কয়েকঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এলএবি’র চেয়ারম্যান থুপস্তান সোয়াং জানিয়েছেন, আমাদের বেশ কয়েকজন শহিদ হয়েছেন। তাঁদের আত্মত্যাগ বৃথা হতে দেব না। প্রসঙ্গত, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে লাদাখকে রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবি ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। সরকারের সঙ্গে লাদাখের প্রতিনিধিদের বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। আগামী ৬ অক্টোবর এলএবি ও কার্গিল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (কেডিএ)-র সদস্যদের সঙ্গে কেন্দ্রের আলোচনায় বসার কথা। তার আগেই এই হিংসার ঘটনা ঘটল। 

    - অগ্নিসংযোগের জেরে কাউন্সিলের সচিবালয় থেকে বেরচ্ছে কালো ধোঁয়া। বুধবার তোলা পিটিআইয়ের ছবি।  
  • Link to this news (বর্তমান)