• বেলুড় মঠের নিয়ম মেনে পুজো রামসীতা বারোয়ারিতে, মায়ের ভোগে থাকে গন্ধমালতি চালের খিচুড়ি, ইলিশ মাছের ভাজা
    বর্তমান | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: সন্ধি পুজোয় মায়ের ভোগের সঙ্গে অড়হড় ডাল মাস্ট। সঙ্গে গন্ধমালতি চালের খিচুড়ি, ইলিশ মাছ ভাজা, বেগুন ভাজা সহ হরেক পদ। মহাষ্টমীতে দেবীর পাতে থাকে আমিষ ভোগ। পোনামাছের ঝোল সহ রকমারি পদ। তমলুক শহরের ১৫০ বছরের পুরনো রামসীতা বারোয়ারি (বাজার) কমিটির পুজো আজও বেলুড়মঠের নির্ঘণ্ট ও নিয়ম মেনে হয়। দেড়শো বছর ধরে বেলুড় মঠ থেকে ডাকযোগে পৌঁছে যায় পুজোর নির্ঘণ্ট ও নিয়মাবলী। ঐতিহ্য বজায় রেখে আজও সারদা মায়ের জন্মস্থান জয়রামবাটি থেকেই পুরোহিত আসেন। তমলুকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বর্গভীমা। শক্তিপীঠ হওয়ার কারণে অতীতে এই শহরে নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে কোনও পুজো হতো না। পূর্বে রূপনারায়ণ নদ থেকে পশ্চিমে আমগেছিয়া খাল, উত্তরে পায়রাটুঙ্গি খাল থেকে দক্ষিণে শঙ্করআড়া খাল অবধি এই নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু, এই সীমানার বাইরে অবস্থান করা পায়রাটুঙ্গি সর্বজনীন এবং রামসীতা বারোয়ারি পুজো করত। শহরের প্রাচীন পুজো হিসেবে এই দুই পুজোর খ্যাতি আজও রয়েছে। ষোড়শোপচারে পুজো হয় রামসীতা বারোয়ারিতে। 

    একটা সময় বেলুড় মঠই রামসীতা বারোয়ারির পুজোর সমস্ত আয়োজন করত। পরবর্তীকালে পুজোর দায়িত্ব পায় তমলুকের রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। যদিও বেশকিছু বছর ধরে সেই পুজোয় আয়োজন করছে রামসীতা বারোয়ারি কমিটি। বেলুড় মঠের নিয়ম মেনে পুজো হওয়ায় বেশকিছু স্বতন্ত্র নিয়ম মেনে এখানে পুজো হয়। যেমন, সাধারণতভাবে নবমীতে কুমারী পুজো হলেও এখানে অষ্টমীতেই কুমারী পুজো হয়। এখানে পুজোর কয়েকটা দিন দু’ রকমের ভোগ হয়। মায়ের জন্য আমিষ ভোগ এবং বিষ্ণুর জন্য নিরামিষ ভোগ। অষ্টমীতে দেবীকে অন্নভোগের সঙ্গে আলুভাজা, ডাল, শাক, কুমড়োর ঘন্ট, পটলের তরকারি, পোনামাছ, তিন ধরনের ভাজা ছাড়াও আলু, কলা, উচ্ছে ও কুমড়া ভাতে দেওয়া হয়। নবমীতে অন্নপ্রসাদের সঙ্গে ডাল, শুক্তো, কুমড়োর ঘন্ট, পোনামাছ, লাউ ডাঁটা দিয়ে কই মাছের পদ, চিংড়ি মাছ দেওয়া হয়। শঙ্করআড়া মায়ের স্থায়ী মন্দির সংলগ্ন এলাকায় একসময়ে বিরাট পানপোস্তা ছিল। এখন সেই বাজার স্থানান্তর হয়েছে। মন্দিরেই প্রতিমা গড়া হয়। নতুন বেনারসি শাড়িতে দেবীকে সাজানো হয়। বুধবার মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, মাকে লাল রংয়ের বেনারসি পরানো হচ্ছে। কমিটির অধীনে প্রায় ৫০০ দোকানদার আছেন। তাঁদের থেকে সংগৃহীত চাঁদায় পুজো হয়। এর বাইরে কারও থেকে চাঁদা আদায় করা হয় না। একটা সময়ে এখানকার পুজো মণ্ডপে শহরের হাজার হাজার মানুষ ভিড় করতেন। প্রাচীন ঐতিহ্য এবং ভক্তির টানে আজও ভক্তের ঢল নামে। পুজো চলাকালীন প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এই মুহূর্তে মঞ্চ বাঁধার কাজ চলছে জোরকদমে। এদিন পুজো কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি সুনীল বেরা, সম্পাদক ভবানী মাইতি সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা তদারকি করছিলেন। সুনীলবাবু বলেন, তমলুক শহরে পায়রাটুঙ্গির পর আমাদের রামসীতা বারোয়ারি কমিটির পুজো প্রাচীনত্বের দিক থেকে দ্বিতীয়। বেলুড় মঠের নিয়ম ও নির্ঘণ্ট মেনে পুজো হয়। আজও বেলুড়মঠ থেকে ডাকযোগে পুজোর নিয়মাবলী আসে। জয়রামবাটি থেকে মা সারদা দেবীর বংশধররা প্রথা মেনে এখান পুজোয় শামিল হন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমাদের এই স্থায়ী মন্দিরে মায়ের উদ্দেশ্যে পুজো ও ভোগ নিবেদন করা হয়। তমলুক শহরবাসীর সঙ্গে এই পুজোর সম্পর্ক ১৫০ বছরের।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)