খুনের পর বাড়িতে মদ্যপানের আসর, রক্তমাখা হাতে চিয়ার্স
বর্তমান | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দীপন ঘোষাল, রানাঘাট: তাহেরপুরে দশম শ্রেণির ছাত্রীকে খুনে অভিযুক্ত প্রনোজিৎ মণ্ডল ওরফে শুভ ছোটবেলা থেকেই বেপরোয়া। একেবারে শৈশবে মা তাকে ছেড়ে পালিয়ে যান। একটু বড় হওয়ার পর বাবাও চলে যান ওড়িশায়। প্রনোজিৎ একাই বাড়িতে থাকে। ফলে, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে নানা কুকর্মে জড়িয়ে যেতে তার বেশি সময় লাগেনি। মদ থেকে গাঁজা—প্রায় সব মাদকের সঙ্গে তার ভাব ছিল বেশ ভালোই। ঘটনার দিন ওই ছাত্রীকে কুপিয়ে খুন করে এসেও নির্বিকার ভঙ্গিতেই মদ্যপানের আসর বসিয়েছিল বাড়িতে। রক্তমাখা হাতে গ্লাস ধরে চিয়ার্সও করেছিল বন্ধুদের সঙ্গে। ব্যান্ডেজও বাঁধা ছিল হাতে। আসরে যোগ দেওয়া বন্ধুরা তার হিমশীতল হাবভাব দেখে অবাক হলেও কিছু বলার সাহস পায়নি।
তাহেরপুর থানার কামগাছি শ্যামনগরের বাসিন্দা ওই দশম শ্রেণির ছাত্রী অনুষ্কা মণ্ডলকে বারবার প্রেমের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ছাত্রীটি কোনওভাবেই তাতে রাজি হচ্ছিল না। শেষে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বাড়ির সামনে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে চপার দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। প্রনোজিৎকে তখন সাক্ষাৎ যমদূত জেনেও সম্ভবত বাঁচার লড়াই করেছিল অনুষ্কা। বাধা দিয়েছিল। সেই কারণেই চপারের আঘাত লেগেছিল প্রনোজিতের হাতেও। সেই ক্ষতস্থানে নিজেই ব্যান্ডেজ করে নিয়েছিল সে। তার পরেই বন্ধুদের বাড়িতে ডেকে মদ্যপানের আসর বসায়।
সোমবার ধৃত প্রনোজিতের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে প্রাথমিক স্কুল চত্বর থেকে উদ্ধার করা হয় খুনে ব্যবহৃত রক্তমাখা চপার। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই স্কুলেই ছিল প্রনোজিতের আড্ডার ঠেক। সন্ধ্যার পর বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সেখানে চলে আসত। বেশ রাত পর্যন্ত চলত গেম খেলা। নানা ধরনের মাদক সেবন। সেই আস্তানাতেই চপারটি লুকিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিল অভিযুক্ত। তার আগে এক বন্ধুকে ফোন করে মদ খাওয়ার প্রস্তাব দেয়।
পুলিশের তদন্তে উঠে আসছে, ছাত্রীকে খুনের সময় আনুমানিক সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত সাড়ে আটটা। এরপর ওই বন্ধুকে ফোন করে মদ্যপানের জন্য বাড়িতে ডাকে প্রনোজিৎ। সেই বন্ধু আবার ফোন করে আরও দু’জনকে। সবাইকে নিয়ে নিজের এক কামরার টিনের ঘরে মদ্যপান করে। তাদের একজন পুলিশকে জানিয়েছে, এমনিতেই প্রনোজিতের সঙ্গে তার কোনও সখ্য নেই। অন্য এক বন্ধুর অনুরোধে সে যেতে রাজি হয়েছিল। তখন রাত ন’টার বেশি।গিয়ে দেখি প্রনোজিতের হাতে রক্তের দাগ। একটা অংশে ব্যান্ডেজ। জানতে চাইলে এড়িয়ে যায় সে। ওর আচরণেও এতটুকুও বোঝা যায়নি, খুনের মতো একটা কাণ্ড ঘটিয়ে এসেছে। ঠান্ডা মাথায় সবার সঙ্গে মদ্যপান করল। রাত ১০টা নাগাদ প্রনোজিতের বন্ধুর বন্ধুটি বেরিয়ে যায়। রাত বারোটা নাগাদ সে জানতে পারে পড়শি ছাত্রী অনুষ্কাকে খুন করেছে প্রনোজিৎ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, নেশা করে সারাদিন ঘরবন্দি থাকত প্রনোজিৎ। সন্ধ্যার পর বের হতো। রাতে নেশা করে তারস্বরে গান বাজাতো। আর অনুষ্কাকে বিরক্ত তার নিয়মিত অভ্যাসে দাঁড়িয়েছিল। ছাত্রীটিকে অনুসরণ করত। প্রেমের প্রস্তাব দিত। এড়িয়ে গেলে ভয় দেখাত। অনুষ্কার পরিবারের তরফে বেশ কয়েকবার বোঝানো হয়েছিল প্রনোজিৎকে। প্রত্যেকেই ভেবেছিলেন, অল্প বয়স। পরে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ভাবনার পরিণতি যে এমন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে, তা ভাবতেই পারছেন অনুষ্কার বাবা-মা।