উজ্জ্বল পাল, বিষ্ণুপুর: শ্বশুরবাড়ির পুজোয় নিমন্ত্রণ না পাওয়ার অভিমানে নিজের বাড়িতে পুজো শুরু করেছিলেন বিষ্ণুপুরের চাঁচর গ্রামের দুই ভাই। লুইধর ও বসুদেব চক্রবর্তী নামে ওই দুই ভাইয়ের কাঠের ব্যবসা ছিল। প্রায় ৪০০বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা দুর্গাপুজো চাঁচর গ্রামের বর্তমান চক্রবর্তী পরিবারের সদস্যরা আজও ধুমধামের সঙ্গে করে আসছেন। এখানে পুজোর বিশেষত্ব হল মহিলারা প্রতিমার সামনে অঞ্জলি দিতে পারেন না। এখানে দশমীর দিন দুপুরে যাত্রাপালা পরিবেশিত হয়।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষ্ণুপুরের বাঁকাদহ গ্রামপঞ্চায়েতের অন্তর্গত চাঁচর গ্রামের উপরপাড়ার চক্রবর্তীদের পুর্বপুরুষদের আদিবাস ছিল বীরভুমের হেতমপুরে। লুইধর ও বসুদেব চক্রবর্তী দুই ভাই পেশায় কাঠের ব্যবসায়ী ছিলেন। বিষ্ণুপুরের চাঁচর এলাকায় তখন ঘন জঙ্গল ছিল। এখানে গাছের ব্যবসা করতে এসে তাঁরা স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান। পরবর্তীকালে ছোট ভাই বসুদেব স্থানীয় একটি পরিবারের মেয়েকে পাত্রীপক্ষের অমতে বিয়ে করেন। পাত্রীর বাড়িতে দুর্গা পুজো হলেও মেয়ে জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়নি। এদিকে ভাইকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পুজোয় নিমন্ত্রণ না করায় দাদা লুইধরের আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। তাই তাঁরা নিজেদের বাড়িতেপুজো চালু করেন। সেই থেকে আজও একইভাবে পুজো হয়ে আসছে। তখনকার দিনের কাঠের আটচালা এবং পুজোর মণ্ডপ আর নেই। নতুন করে সব কিছুই সাজানো হয়েছে। এখন স্থায়ী পাকা মন্দিরে পুজো হয়। প্রতিমাও হয় আগের মতোই সাবেকি গড়নে। পুজোয় প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড় হয়। মন্দিরের সামনে একটি আটচালা নির্মাণ করা হয়েছে।
পরিবারের সদস্য স্বপন চক্রবর্তী বলেন, ‘আগে প্রচুর জমি জমা থাকলেও বর্তমানে সেসব নেই। মূলত পারিবারিক চাঁদা থেকেই পুজোর আয়োজন করা হয়।অন্নভোগের জন্য কোনও নিমন্ত্রণের ব্যাপার নেই। যে কেউ তাতে অংশ নিতে পারেন। অন্নভোগ পেতেআশেপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষজন আসেন।’
পরিবারের অপর এক সদস্যাসুস্মিতা চক্রবর্তী বলেন, ‘পুজোর নানা আচার অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমেই আমরা আনন্দ উপভোগ করি। পুজোর কটা দিন বাইরে কোথাও যাওয়া হয় না। নিজেদের পুজোতেই আমরা ব্যস্ত থাকি। প্রচুর আত্মীয়স্বজন আসেন। আমাদের পুজোর বিশেষত্ব হল, এখানে দশমীর দিন দুপুর বেলায় যাত্রাপালা পরিবেশিত হয়। অষ্টমীর দিন পুরুষরা অঞ্জলি দিতে পারলেও মহিলারা দিতে পারেন না। তবে, কলাবউয়ের সামনে মহিলারা অঞ্জলি দেন।’