• তারানগরে পদ্মার ভাঙন দু’ঘণ্টায় বিলীন ১৫টি বাড়ি, নদীর পাড়ে ঝুলছে আরও ঘর, আতঙ্ক
    বর্তমান | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, লালবাগ: লালগোলার তারানগরে পদ্মার ভাঙন অব্যাহত। কয়েকদিনের বিরতির পর মঙ্গলবার রাতে আবার লালগোলার তারানগরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়। মাত্র দু’ঘণ্টার ভাঙনে ১৫টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে যায়। নদীর পাড়ে ঝুলে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি বাড়ি। যেকোনও মুহূর্তে ওই বাড়িগুলি নদীগর্ভে চলে যাবে। পুজোর আগে লাগাতার পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে তারানগর গ্রামজুড়ে শুধুই আতঙ্ক ও বিষাদের সুর। মঙ্গলবার রাতের ভাঙনে গৃহহীন পরিবারগুলি এখন খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছেন। ভাঙনের খবর পেয়ে রাতেই তারানগরে ছুটে যায় লালগোলা থানার পুলিশ। বুধবার সকালে ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরাও ঘটনাস্থলে যান। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে বুধবার দুপুরে রঘুনাথগঞ্জ থানার রাধাকৃষ্ণপুরে নতুন করে ভাঙনে একটি লিচু বাগানের আটটি লিচুগাছ নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে।

    লালগোলা বিডিও দেবাশিস মণ্ডল বলেন, মঙ্গলবার রাতের ভাঙন বিধ্বস্ত পরিবারগুলিকে তারানগর প্রাইমারি স্কুল ও শেখালিপুর হাইস্কুলে শিফট করা হয়েছে। স্কুলগুলিতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলিকে প্রশাসনের পক্ষ রান্না করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে কয়েকটি পরিবার তাদের আত্মীয়-পরিজনদের বাড়ি আশ্রয় নিয়েছেন। আগস্ট মাস থেকে তারানগরে পদ্মার ভাঙন চলছে। গত একমাসে কয়েক দফা ভাঙনে ১২টি বাড়ি, রাস্তা, ১৫-২০ বিঘা চাষের জমি, আম-লিচু বাগান এবং প্রচুর সংখ্যায় গাছপালা নদীগর্ভে চলে যায়। ভাঙনে গৃহহীন পরিবারগুলি বসতভিটে হারিয়ে স্কুলের ত্রাণশিবিরে, আত্মীয়-পরিজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। পদ্মার বিধ্বংসী রুপে আতঙ্কিত হয়ে অনেকেই জিনিসপত্রের পাশাপাশি ঘরবাড়ি ভেঙে দরজা-জানালা খুলে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। মাঝে কয়েকদিন বিরতির পর মঙ্গলবার রাত প্রায় ৮টা থেকে তারানগরে ভাঙন শুরু হয়। রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত লাগাতার ভাঙন চলে। তারানগরবাসীর চোখের সামনে ১৫টি বাড়ি গিলে খায় পদ্মা। দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না তাঁদের। স্থানীয় একটি আমবাগানে খোলা আকাশের নীচে গ্রামের অন্য কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরতি ঘোষ। তাঁর চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ভাঙন না হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে কিছু বুঝে ওঠার আগে আচমকা পুরো বাড়িটাই বসে যায়। নিজেরা কোনওমতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও গোয়ালে থাকা গোরু দু’টিকে বের করতে পারিনি। ওরা রাতের অন্ধকারে পদ্মায় ভেসে গিয়েছে। গ্রামবাসী শ্যামল ঘোষ বলেন, পদ্মা যেন রাক্ষসীর রূপ নিয়েছে। তারানগরকে গিলে খাচ্ছে। হয়ত আগামী দু’-এক বছরে লালগোলার মানচিত্র থেকে তারানগর হারিয়ে যাবে। লালগোলার বিধায়ক মহম্মদ আলি বলেন, ভাঙন একটি বড় বিপর্যয়। ভাঙন রোধে রাজ্য সরকার ৭ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে। জুন মাসে কাজও শুরু হয়। কিন্তু নদীতে জল বেড়ে যাওয়ায় কাজ বন্ধ 

    রয়েছে। জল কমলেই কাজ শুরু 

    হবে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)