সুড়ঙ্গপথে পার্বতীর সঙ্গে দেখা করতে যান পাতালভৈরব! বিনপুরের ওঁরগোদায় নানা কিংবদন্তী
বর্তমান | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: বিনপুরের ওঁরগোদার পাতাল ভৈরব সুড়ঙ্গপথে দেবী রঙ্কিনীর সঙ্গে দেখা করতে যান। সেইসময় কেঁপে ওঠে ভূমি। অর্ধশতক ধরে ঘুমিয়ে থাকা সেই পাতাল দেবেরই দুর্গা দশমীতে ধূমধাম করে পুজো হয়। পাতালদেব আবার দেবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ভক্তরা তাঁর অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।
বিনপুর- ২ ব্লকের ছোট্ট গ্ৰাম ওঁরগোদা। ছোটনাগ পুর মালভূমির শেষ প্রান্ত। গ্ৰামের খোলা মাঠের মাঝে পাতাল ভৈরবের ভগ্ন মন্দির। সুদূর অতীতে অজ্ঞাত কোনও কারণে থমকে গিয়েছিল মন্দির নির্মাণের কাজ। অর্ধসমাপ্ত খিলান আজও হেলে আছে। দেব দর্শনে সিঁড়ি দিয়ে মন্দিরের বেদি স্থলে উঠতে হয়। বেদির উপর খোলজাতীয় বাদযন্ত্রের আকারে পাতাল ভৈরবের মূর্তি। ভক্তদের বিশ্বাস, পাতালদেব জেগে উঠলে মূর্তির সারা শরীর ঘেমে যায়। মুখের ছিদ্র দিয়ে ধোঁয়া বের হতে থাকে। সুড়ঙ্গপথ ধরে ধলভূমগড়ের দিকে দেবী রঙ্কিনীর সঙ্গে যখন দেখা করতে যান পাতালদেব, তখন মাটি কাঁপে। বছর পঞ্চাশ আগে শেষবার পাতাল ভৈরবের মুখ থেকে এমন ধোঁয়া নির্গত হয়েছিল। তাতে মূর্তির সারা শরীর ঘেমে উঠেছিল। এমনকি, মন্দিরের চারপাশ কেঁপে উঠেছিল সেইসময়। স্থানীয় মানুষ ছুটে এসে পাতালদেবের মূর্তিতে দুধ ঢেলেছিলেন। পাতালদেবের নিত্য পুজো হয় আজও।
স্থানীয় পাতিনা সম্প্রদাায়ের পাহান পুরোহিত সপ্তমী থেকে নবমী পাতালদেবের পুজো করেন। এছাড়া সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষজন দশমীতে পাতাল দেবের পুজো করেন। এখানে বলির প্রচলন রয়েছে। দশমী থেকে ত্রয়োদশী মেলা বসে। পাতাল ভৈরব ও রঙ্কিনী শিব, দুর্গারই আর এক রুপ। সুড়ঙ্গপথে দেবদেবীর সাক্ষাৎ ও সৃষ্টিচক্র নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে কিংবদন্তি ছড়িয়ে আছে। মন্দিরের পুরোহিত রবীন্দ্র পাহান বলেন, ভক্তরা বিশ্বাস করেন মন্দিরের নীচে পাতাল ভৈরব থাকেন। পাতাল ভৈরব যখন সুড়ঙ্গপথ ধরে দেবীর সঙ্গে দেখা করতে যান তখন মন্দির ও চারপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে। এই ভৈরব কয়েক দশক অন্তর জেগে ওঠেন।
এলাকার বাসিন্দা ড. শিবশঙ্কর সরেন বলেন, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মানুষ বহু প্রাচীন কাল থেকেই এই স্থানে পাতাল ভৈরবের মূর্তি পুজো করে আসছেন। পাতাল ভৈরব ও দেবী রঙ্কিনীর সাক্ষাৎ নিয়ে স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস গভীর। এলাকায় মাকড়া পাথরের মন্দিরের একটি ভগ্নাবশেষ ও বৃহৎ একটি ষাঁড়ের মূর্তি রয়েছে।
জেলার পুরাতত্ত্ববিদ সুশীলকুমার বর্মন বলেন, এলাকায় বহু ভগ্ন জৈন মন্দিরের অবশেষ পড়ে আছে। বৃহৎ ষাঁড়ের মূর্তিও রয়েছে। যা শৈব মন্দিরের ইঙ্গিত দেয়। এলাকার প্রবীণদের কাছে মূর্তির মুখ-চোখ দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়া ও কম্পনের কথা শুনেছি। বেদির যে জায়গায় মূর্তি বসানো আছে, তার নীচে বড় ছিদ্র রয়েছে। মাটির নীচে কোনও বায়বীয় প্রস্রবন থাকতে পারে। সেই কারণেই ধোঁয়া বের হয়।-নিজস্ব চিত্র