• ছন্দে ফিরতে মরিয়া কলকাতা, মৃতদের ২ লক্ষ ক্ষতিপূরণ, চাকরিও
    বর্তমান | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রোদ উঠেছিল সকাল থেকে। বেলা একটু বাড়তেই আবার খানিক বৃষ্টি। তবে বিক্ষিপ্ত এলাকায়। এটুকু ছন্দপতন ছাড়া দিনভর চড়া রোদের দাপটেই কাটল দ্বিতীয়া। আর তা দেখেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল আম বাঙালি। সোমবার রাতে শুরু হওয়া অতি বর্ষণে ভেসে গিয়েছিল গোটা কলকাতা। নিউ মার্কেট-গড়িয়াহাট-হাতিবাগানে বিক্রেতাদের বিপুল ‘পুজোর সম্ভার’ও ভিজে ঢোল বৃষ্টিতে। মঙ্গলবারই দোকান গোছানোর কাজ শুরু করেছিলেন তাঁরা। বুধবার সেই জিনিসপত্র শুকোনোর চেষ্টার পাশাপাশি চলল বেচাকেনাও। পাড়ার অলিগলিতে পুজো মণ্ডপে এসে গিয়েছে ঠাকুর। মাইক থেকে গানের সুর ভেসে আসছিল। তাই শেষ মুহূর্তের বাজারের সঙ্গে চুটিয়ে ‘প্যান্ডেল হপিং’য়ে নেমে পড়েছিল সাধারণ মানুষ। সব মিলিয়ে দেবীপক্ষের শুরুতেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া কলকাতা এখন ছন্দে ফিরতে মরিয়া।

    শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য, চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একডালিয়া, সিংহি পার্ক সহ একাধিক পুজো মণ্ডপ উদ্বোধন করতে এসে তিনি জানান, ‘মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে দেবে রাজ্য। সিইএসসির গাফিলতির জন্যই এই ঘটনা। ওদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে দিতে হবে সঙ্গে চাকরি। নয়তো আমরা সরকারের পক্ষ থেকে পরিবারের একজনকে হোম গার্ডে চাকরি দেব।’ বারাসতের অস্থায়ী পঞ্চায়েত কর্মী মিরাজ আলি মঙ্গলবার বিদ্যুত্পৃষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন। এদিন তাঁর স্ত্রীর হাতে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান তুলে দেয় বারাসত ২ ব্লকের তৃণমূল নেতৃত্ব। যদিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। ওই ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গড়ার আর্জি জানিয়ে আদালতে গিয়েছেন আইএসএফ বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকীও।

    গড়িয়াহাট-বালিগঞ্জের রাস্তার দু’ধারজুড়ে পড়ে প্লাস্টিকের স্তূপ পড়েছিল এদিন। নষ্ট হয়ে যাওয়া মালপত্র ফেলে দিয়েছেন দোকানিরা। এদিন সকালের দিকেই গড়িয়াহাটে এক পশলা বৃষ্টি হয়। তারপর ইতিউতি দোকানপাটের ছাউনি ওঠে। শুরু হয় কেনাকাটা। গড়িয়াহাটের ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ ঘোষ বলছিলেন, ‘গড়িয়াহাটজুড়ে কয়েক কোটি টাকার মালপত্র নষ্ট হয়েছে। অনেক হকারদের বাড়ি কলকাতা থেকে বেশ দূরে। তাঁরা তো আসতেই পারেনি। গোলপার্কের দিকে একজন বই বিক্রেতা রয়েছেন। তাঁর প্রচুর ক্ষতি হয়েছে।’ শুধু হকার নয়, ‘স্ট্যান্ডিং’ দোকানগুলোর ভিতরেও জল ঢুকে গিয়েছে। সেই দোকানিরাও জল সরিয়ে জিনিসপত্র সাজাতে বসে গিয়েছিলেন সকাল থেকে। গড়িয়াহাটের দোকানি মহম্মদ ইরশাদ বললেন, ‘পুজোর সময় স্টক অনেকটাই তুলেছিলাম। প্রায় লাখ খানেক টাকার মাল ভিজে গিয়েছে। এইগুলো তো বিক্রিও হবে না।’ তবু বেলা বাড়তেই বিক্রি শুরু হওয়ায় আশা বুক বেঁধেছেন বিক্রেতারা।

    মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করে চলে যেতেই শহরে উত্তর থেকে দক্ষিণে মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় চোখে পড়ে। হাতিবাগান নবীন পল্লীর পূজা উদ্যোক্তা অমিতাভ রায় বলেন, ‘রোদের দেখা মিলেছে। রাস্তাঘাট থেকে জল নেমেছে। আর যেন বৃষ্টি না হয় সেটাই মায়ের কাছে প্রার্থনা।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)