কংসনারায়ণের প্রতিষ্ঠা করা বাংলার প্রথম দুর্গামূর্তি পুজো পায় জলপাইগুড়িতে! কোথায় হয় সেই পুজো?
বর্তমান | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: রাজা কংসনারায়ণের প্রতিষ্ঠা করা অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তি আজও পুজো পাচ্ছে জলপাইগুড়িতে। শুধু পাঁচদিন নয়, বছরভর ওই দুর্গা পূজিত হন কংসনারায়ণের উত্তরসূরীদের পরিবারে। জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়ায় চক্রবর্তী বাড়িতে রয়েছে পাঁচ শতাধিক বছরের পুরনো ওই অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তি। গবেষকদের অনেকে মনে করেন, রাজা কংসনারায়ণ অবিভক্ত বাংলায় দুর্গামূর্তি পুজোর প্রবর্তক। সেই হিসেবে জলপাইগুড়িতে পুজো পাওয়া এই অষ্টধাতুর মূর্তিটি বাংলায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম দুর্গামূর্তি বলে দাবি কংসনারায়ণের বংশধরদের। তাঁদের দাবি, ১৪৮০ সালে রাজা কংসনারায়ণ বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার তাহেরপুরে মন্দির বানিয়ে নিজে এই দুর্গামূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর নদীয়া ঘুরে ময়মনসিংহ হয়ে ১৯৪৮ সালে বংশধরদের হাত ধরে ওই মূর্তি আসে জলপাইগুড়িতে। তখন থেকে এখানেই পূজিত হয়ে আসছে অষ্টধাতুর মা দুর্গা। প্রতিমার উচ্চতা ৯ ইঞ্চি। মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তিতে দেবীর বাহন সিংহ উপস্থিত। রয়েছে মহিষের মাথা। তবে মা দুর্গার চার সন্তানের মধ্যে কার্তিক, গণেশ থাকলেও অনুপস্থিত লক্ষ্মী-সরস্বতী। পরিবারের দাবি, ১৯৯০ সাল নাগাদ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তরফে তাদের বাড়িতে থাকা অষ্টধাতুর মূর্তিটির কার্বন টেস্টিং করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, মূর্তিটির বয়স অন্তত সাড়ে ছ’শো বছর! কংসনারায়ণের উত্তরসূরীদের পুজোর বিশেষত্ব, ঢাকি থেকে পুরোহিত কেউই বাইরে থেকে আসেন না। সমস্ত দায়িত্বে পরিবারের সদস্যরা। পূর্বপুরুষ দুর্গাদাস চক্রবর্তীর লেখা পুঁথি মেনে বৃহৎনন্দিকেশ্বর মতে পুজো হয়। অষ্টমী পর্যন্ত দেবীকে নিরামিষ ভোগ দেওয়া হলেও নবমীতে পরিবেশন করা হয় বোয়াল মাছ। সারাবছর দেবীকে দেওয়া হয় অন্নভোগ। একসময় মহিষ, পাঁঠা ও পায়রা বলির চল থাকলেও ১৯৯৬ সাল থেকে পুরোপুরি বন্ধ পশুহত্যা। এখন চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। দশমীতে মা দুর্গাকে খেতে দেওয়া হয় পান্তাভাত, ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচুশাক, শাপলার ঝোল আর ডালের বড়ি। অষ্টধাতুর মূর্তির পাশাপাশি মৃন্ময়ী প্রতিমারও পুজো হয় চক্রবর্তী বাড়িতে। দু’টি ঘট থাকে। মৃন্ময়ী প্রতিমার সঙ্গে একটি ঘট বিসর্জন হলেও অষ্টধাতুর মূর্তির সামনে থাকা তামার ঘটটি তুলে রাখা হয়।পরিবারের বর্তমান বংশধর অর্ঘ্য চক্রবর্তী বলেন, হুসেন শাহের অতর্কিত আক্রমণের মুখে পড়েন কংসনারায়ণ। তখন তাঁর ছেলে মুকুন্দরাম কোনওমতে অষ্টধাতুর ওই দুর্গামূর্তি নিয়ে পালিয়ে আসেন। আশ্রয় নেন নদীয়ায় শ্রীহট্ট সেনের বাড়িতে। পরিচয় গোপন করতে শ্রীহট্ট সেন তাঁকে ‘রাজ চক্রবর্তী’ উপাধি দেন। নতুন পরিচয়ে ওই অষ্টধাতুর মূর্তির পুজো শুরু করেন মুকুন্দরাম। পরে শ্রীহট্ট সেনের সহযোগিতায় ময়মনসিংহে জমিদারি ফিরে পেলেও দেশভাগের পর কংসনারায়ণের উত্তরসূরীরা চলে আসেন জলপাইগুড়িতে। দেশভাগের আঁচড়ে রাজার বংশধরদের মনে ক্ষত তৈরি হলেও বন্ধ হয়নি পুজো।