তুমুল বৃষ্টিতে কলেজ স্ট্রিটে কোটি টাকার বইয়ের সলিল সমাধি! বিকল একাধিক ছাপাখানার যন্ত্রও
প্রতিদিন | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার: আকাশ ভেঙে মুষলধারে বৃষ্টি। জলের তোড়ে ভেসে গেল বই। লক্ষ, লক্ষ নতুন বই এক হাঁটু জলের তলায়। ছিঁড়ে ফর্দাফাই পুজোবার্ষিকী, কমিক্স সমগ্র। শীর্ষেন্দু, সমরেশ মজুমদার, সত্যজিৎ রায়, আশাপূর্ণা দেবীর বিখ্যাত বইগুলি কলার ভেলার মতো ভাসছে অকূল পাথারে।
শরতের অকাল বৃষ্টিতে বিপুল ক্ষতির মুখে কলেজ স্ট্রিট বইপাড়ার প্রকাশকরা। দীপ প্রকাশনী, দে’জ পাবলিশিং, পত্রভারতীর মতো বড় প্রকাশকদের পাশাপাশি বিপুল ক্ষতির মুখে ধ্যানবিন্দু, বুকফার্মের মতো ছোট-মাঝারি প্রকাশকরাও। শুধু বই নয়, মঙ্গলবার ভোররাতের বৃষ্টিতে জলে ডুবে বিকল হয়ে গিয়েছে একাধিক ছাপাখানার যন্ত্রও। যা দেখেশুনে প্রকাশকরা বলছেন, “এই ক্ষতি এড়াতে মা দুর্গাই ভরসা!” ধ্যানবিন্দু প্রকাশনার অভীক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রায় ৬০ হাজার টাকার লিটল ম্যাগাজিন জলে ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মৌলালিতে ছাপাখানায় বই ছাপাতে দিয়েছিল ধ্যানবিন্দু। সেই ছাপাখানায় জল ঢুকে সমস্ত বই ভেসে গিয়েছে।
রাতভর বৃষ্টি। তখন অঘোর ঘুমে গোটা শহর। সকাল হতেই প্রকাশকরা বুঝতে পারেন সাড়ে সর্বনাশ। জল জমে বাস-অটো বন্ধ। বরানগর থেকে সাইকেল চালিয়ে কলেজ স্ট্রিটে বইপাড়ায় এসে অভীকবাবু দেখেন দোকান জলের তলায়। বই ভিজে এমন অবস্থা, তা বিপুল ছাড়ে বিক্রি করাও অসম্ভব। দীপ প্রকাশনের দীপ্তাংশু মণ্ডল জানিয়েছেন, বইয়ের পাতা ভিজে ফুলে গিয়েছে। ছিঁড়ে ফর্দাফাই। প্রায় তিন লক্ষ টাকার বই জলে ভিজে শেষ। দীপ্তাংশুর কথায়, “পুজোর মুখে নতুন প্রকাশ পাওয়া দু’টি বই হটকেকের মতো বিক্রি হচ্ছিল। মহাস্থবির জাতক, আলো আঁধারির গোপাল পাঁঠা ভিজে দফারফা।”
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “কমবেশি সকলেরই ক্ষতি হয়েছে। পত্রভারতীর বিপুল ক্ষতি হয়েছে। ইনসিওরেন্স ক্লেম করেছি।” আমফানের সময়ও প্রচুর প্রকাশকের ক্ষতি হয় ঝড়জলে। সে সময় ছোট প্রকাশকদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছিল পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড। ত্রিদিবের কথায়, “ছোট বিক্রেতাদের সিংহভাগের আধারকার্ড নেই। নিজের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। পরিকল্পনাহীনভাবে চলছে বইপাড়া। এই রীতি দ্রুত বদলাতে হবে।”