• চার বেসামরিক নিহত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক দায় চাপাল সোনম ওয়াংচুকের ওপর
    আজকাল | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: লাদাখের রাজধানী লেহ শহরে গতকালকার হিংসাত্মক  বিক্ষোভে অন্তত চার বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের পরিচয় প্রকাশ করেছে প্রশাসন। এদিকে লেহ ও কারগিল—উভয় জেলাতেই কারফিউ বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আজ ও আগামীকাল লাদাখের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবে বলে জানালেও, নিহতদের পরিবার ও বিক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে প্রবল ক্ষোভ কাজ  করছে।

    প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত চারজনই লেহ জেলার বাসিন্দা: থারচিন (৪৬), স্কুর বুচান গ্রামের বাসিন্দা। জিগমেত দর্জে (২৫), খর্নাল্লিং গ্রামের বাসিন্দা, স্তানজিন নামগিয়াল (২৩), ইগু গ্রামের বাসিন্দা, দাদুল (২০), আর্যন ভ্যালির হানু গ্রামের বাসিন্দা। সবাই বেসামরিক ছিলেন এবং পুলিশের পাল্টা অভিযানে তাঁরা প্রাণ হারান বলে স্থানীয়রা দাবি করেছেন।

    কী ঘটেছিল লেহ-তে?

    ১০ সেপ্টেম্বর থেকে জলবায়ু কর্মী ও শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুকের নেতৃত্বে একটি অনশন কর্মসূচি চলছিল লেহ-তে। লাদাখকে বিশেষ সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়ার দাবিতে ওই উপবাস চলছিল। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে লাদাখ অটোনোমাস হিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল  কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ বাঁধে। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং সরকারি দপ্তর, বিজেপি কার্যালয় ও একটি পুলিশ গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

    স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেছে যে, সোনম ওয়াংচুক “আরব বসন্ত-ধাঁচের আন্দোলন” ও “নেপালের জেন জেড বিক্ষোভ” এর উদাহরণ টেনে তরুণদের উস্কে দিয়েছেন। মন্ত্রকের দাবি, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালায়, যাতে অন্তত ৩০ জন পুলিশ ও সিআরপিএফ সদস্য আহত হন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “এটি পরিষ্কার যে জনতাকে সোনম ওয়াংচুক প্ররোচিত করেছিলেন তাঁর উসকানিমূলক বক্তব্যের মাধ্যমে।”

    যদিও বাস্তবে লাদাখের নেতাদের উত্থাপিত চার দফা দাবি—১. কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের রাজ্যের মর্যাদা,২. ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তি,৩. স্থানীয়দের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণ,৪. জমির একচেটিয়া অধিকার—কোনোটিই এখনো পূরণ করা হয়নি।

    ২৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার লেহ ও কারগিলে সম্পূর্ণ বন্ধ পালিত হচ্ছে। বাজার, অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক সব বন্ধ রয়েছে। ব্যক্তিগত ও গণপরিবহন সম্পূর্ণভাবে থমকে গেছে। কারগিলের ডেপুটি কমিশনার রাকেশ কুমার ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সনহিতা (BNSS) ২০২৩-এর ধারা ১৬৩ অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এই ধারা আগের ঔপনিবেশিক যুগের দণ্ডবিধি CrPC ১৪৪-এর আধুনিক রূপ।আদেশ অনুযায়ী—

    কোনও মিছিল, সভা, বা প্রকাশ্য বিক্ষোভের জন্য পূর্বানুমতি প্রয়োজন।

    মাইক বা লাউডস্পিকারের ব্যবহার নিষিদ্ধ।

    পাঁচ জনের বেশি মানুষের জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

    শান্তি ভঙ্গ করতে পারে এমন যে কোনও বক্তব্য, বিবৃতি বা বার্তা প্রকাশও নিষিদ্ধ।

    লেহতেও একই ধরনের নির্দেশ জারি করেছেন জেলা শাসক রোমিল সিং দঙ্ক। প্রশাসন জানিয়েছে, জনস্বার্থে এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এই আদেশ কার্যকর থাকবে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত। লাদাখের দুই জেলায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করছে। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, সরকারের কঠোর মনোভাব এবং দাবিগুলোতে অনীহাই এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সার্বিকভাবে, লাদাখের পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত। একদিকে নিহতদের শোক ও ক্ষোভ, অন্যদিকে সরকারের কঠোর অবস্থান—উভয় মিলে আগামী কয়েক দিন এই সীমান্ত অঞ্চলে অনিশ্চয়তার আবহ জারি থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
  • Link to this news (আজকাল)