লাঞ্চে বাসি কেক খেয়েই সব শেষ! সহপাঠীদের চোখের সামনে মর্মান্তিক পরিণতি দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রের ...
আজকাল | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাড়ি থেকে খাবার এনেই লাঞ্চ ব্রেকে খেয়েছিল সে। কেক খেয়েই আচমকা শরীরে অস্বস্তি। মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ! স্কুলের ক্লাসরুমেই সহপাঠীদের চোখের সামনে মর্মান্তিক পরিণতি দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রের।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে তামিলনাড়ুর রানিপেট্টাই জেলায়। জানা গেছে, স্কুলের লাঞ্চ ব্রেকে এক টুকরো কেক খেয়েছিল দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। ওই কেক খাওয়ার পরেই জ্ঞান হারিয়ে ক্লাসরুমে লুটিয়ে পড়ে সে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
আট বছর বয়সি পড়ুয়ার নাম মিঠুন। ঘটনার জেরে অনেকেই কেটে বিষক্রিয়ার অভিযোগ তুলেছেন। যা ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যেও আতঙ্কের ছায়া। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কাভানুরের কাছে একটি বেসরকারি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল সে। সেদিন বাড়ি থেকেই টিফিন এনেছিল। টিফিনে এক টুকরো কেক ছিল। লাঞ্চ ব্রেকে সহপাঠীদের সঙ্গে বসেই মিঠুন বাড়ি থেকে আনা খাবার খায়।
লাঞ্চ ব্রেকের পরেই সহপাঠীরা লক্ষ করেন, মিঠুনের মুখ ক্রমেই ফুলে যাচ্ছে। কয়েক মিনিট পরেই বেঞ্চেই ঠাস করে লুটিয়ে পড়ে সে। শিক্ষক ও কর্মীরা তড়িঘড়ি করে ছুটে এসেই তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু হাসপাতালে যাওয়ার পরেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
তড়িঘড়ি করে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, কেক খাওয়ার জেরেই মিঠুনের মর্মান্তিক পরিণতি ঘটতে পারে। কেক চারদিন আগে স্থানীয় একটি দোকান থেকে কেনা হয়েছিল। কেকের টুকরোটি বাসি ছিল। সেটি খাওয়ার জেরে মিঠুনের শরীরে বিষক্রিয়া হয়। তার পরিবারকেও জানানো হয় বিষয়টি।
যদিও পুলিশের দাবি মানতে নারাজ মৃত পড়ুয়ার বাবা। তিনি জানিয়েছেন, ওই কেকের টুকরো মিঠুনের দিদিও খেয়েছিল। তার কিছুই হয়নি। তাঁদের সন্দেহ, মিঠুনের মৃত্যুর নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে। রহস্যমৃত্যু ঘিরে উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসেই ন'বছরের এক ছাত্রীর সঙ্গে এমন ঘটনাই ঘটেছিল। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ন'বছরের ছাত্রীটির নাম প্রাচী কুমায়াত। রাজস্থানের সিকার জেলার দন্ত শহরের একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল সে। মঙ্গলবার স্কুলে টিফিন পিরিয়ডের ঘণ্টা বাজতেই সহপাঠীদের সঙ্গে বেঞ্চে বসেই খাওয়াদাওয়া শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ব্যাগ থেকে টিফিন বাক্স বের করে বেঞ্চে রাখার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটে বিপত্তি। টিফিন বাক্স খোলার পরেই জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে বেঞ্চের ওপর।
সহপাঠীরা জানিয়েছে, প্রাচীকে কখনও অসুখে ভুগতে দেখেনি তারা। সেদিন কোনও শারীরিক অসুস্থতাও ছিল না তার। স্কুলে এসে রোজের মতো স্বাভাবিক ছিল। খেলাধুলা করেছে। একের পর এক পিরিয়ডে পড়াশোনা করেছে। জ্ঞান হারানোর আগে শারীরিক অসুস্থতার কোনও লক্ষণ তার শরীরে দেখা যায়নি।
জানা গেছে, সহপাঠীদের থেকে প্রাচীর জ্ঞান হারানোর খবর পেয়েই তড়িঘড়ি ছুটে আসেন শিক্ষকরা। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার রক্তচাপ দ্রুত কমে যাচ্ছে। পালস পাওয়া যাচ্ছে না। শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে তার। এই সবগুলোই আসলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের লক্ষণ।
এদিকে চিকিৎসকদের এমন দাবি মানতে নারাজ ছিলেন প্রাচীর বাবা-মা। সেই হাসপাতাল থেকে প্রাচীকে নিয়ে সিকারের আরও বড় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন। কিছুক্ষণ পরেই প্রাচীকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টেই প্রাচীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রাচীর বাবা ও মা জানিয়েছেন, ঘটনার তিনদিন আগে থেকেই সামান্য জ্বরে ভুগছিল সে। আর্দশ বিদ্যা মন্দির স্কুলের প্রিন্সিপাল নন্দ কিশোর তিওয়ারি জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের শেষ থেকে চলতি সপ্তাহের শুরু পর্যন্ত তিনদিন স্কুলে অনুপস্থিত ছিল প্রাচী। সুস্থ হয়ে মঙ্গলবার স্কুলে এসেছিল। স্কুলে প্রার্থনার সময়েও তাকে চনমনে দেখাচ্ছিল। কোনও অসুস্থতার লক্ষণ শিক্ষক এবং সহপাঠীরা বুঝতে পারেনি। টিফিন খাওয়ার সময়েই হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে সে বেঞ্চে লুটিয়ে পড়ে। তৎক্ষণাৎ তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেই মৃত্যু হয় তার।
এদিকে স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, 'অচৈতন্য অবস্থায় ন'বছরের ছাত্রীটিকে তার স্কুলের শিক্ষকরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল। সে সময় তার রক্তচাপ একেবারে কমে গিয়েছিল। আমরা সিপিআর দিয়েছিলাম। অক্সিজেন, জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ, ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছিল। অবশেষে অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে তাকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়।'
চিকিৎসকরা এও জানিয়েছেন, দেড় ঘণ্টা ধরে প্রাচীর চিকিৎসা চলেছে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। তার দেহ ময়নাতদন্ত না করেই নিয়ে যায় পরিবার। তারাও শোকে ভেঙে পড়েছে। তবে হার্ট অ্যাটাকে প্রাচীর মৃত্যু হয়নি বলেই মত চিকিৎসকদের। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। হয়তো আগে থেকেই হার্টের অসুখে ভুগছিল। পরিবারের কেউ লক্ষ করেনি। তাই বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়নি। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।