১০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ, ৩৯ বছর জেল খাটার পর আদালত বলল, ‘আপনার কোনও দোষ ছিল না’...
আজকাল | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঘুষ নেওয়া অপরাধ। বিশেষ করে সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে আকছার ঘুষ নেওয়ার খবর আমরা শুনতে পাই। কেউ ঘুষ নেওয়ার দোষে শাস্তি পান, কেউ বা পার পেয়ে যান। কিন্তু যদি মিথ্যে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে যদি আপনি দোষী সাব্যস্ত হন। সেই দোষে ৩৯ বছর জেলও খাটার পর যখন আদালত আপনাকে বেকসুর খালাস করে দেয় তখন মনের হাল কী হয়?
ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরে এক মর্মান্তিক ঘটনা সামনে এসেছে। রায়পুরের বাসিন্দা ৮৩ বছর বয়সী জগেশ্বর প্রসাদ আওয়াধিয়ার জীবন একটি মিথ্যে ঘুষ মামলার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে জগেশ্বর প্রসাদের বিরুদ্ধে ১০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এই অভিযোগের ফলে তিনি তাঁর চাকরি, পরিবার এবং সুনাম হারিয়ে ফেলেছিলেন। এখন, ৩৯ বছর পর ছত্তিশগড়ের হাইকোর্ট তাঁকে সম্পূর্ণ নির্দোষ ঘোষণা করেছে। কল্পনা করুন, একজন ব্যক্তি তাঁর জীবনের ৩৯ বছর ধরে একটি মিথ্যে ঘুষ মামলাযর বিরুদ্ধে লড়াই করে কাটিয়েছেন। যে মামলার কারণে তাঁর গোটা জীবন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখন, জগেশ্বর সরকারের কাছে তাঁর আটকে থাকা পেনশন এবং আর্থিক সহায়তার দাবি করছেন যাতে তিনি শান্তিতে তার জীবনযাপন করতে পারেন।
মিথ্যা ঘুষের অভিযোগ কখন করা হয়েছিল?
এই ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৮৬ সালে। তখন জগেশ্বর মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের রায়পুর অফিসে বিলিং সহকারি হিসেবে কাজ করতেন। অপর এক কর্মী অশোক কুমার বর্মা, তাঁকে তাঁর বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য চাপ দেন। এর পর নিয়মে উল্লেখ করে, জগেশ্বর বকেয়া বিল পরিশোধ করতে রাজি হননি। পরের দিন অশোক ২০ টাকা ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু জগেশ্বর তা ফিরিয়ে দেন।
১০০ টাকার জন্য জগেশ্বরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল
এরপর, ১৯৮৬ সালের ২৪শে অক্টোবর, অশোক আবার জগেশ্বরকে ১০০ টাকা (দু’টি ৫০ টাকার নোট) দিয়ে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেন। ইতিমধ্যে, একটি ভিজিল্যান্স দল সেখানে অভিযান চালিয়ে জগেশ্বর হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। জগেশ্বর দাবি করেন যে তাঁর গ্রেপ্তারটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। গ্রেপ্তারির সময় জগেশ্বরের হাত রাসায়নিক দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়েছিল এবং প্রমাণ হিসেবে নোটটি পেশ করা হয়েছিল। জগেশ্বর নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও কেউ শোনেননি।
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত বরখাস্ত
এই ঘটনা জগেশ্বর প্রসাদের পুরো জীবন ধ্বংস করে দেয়। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তাঁকে বরখাস্ত করা হয়। তারপর রেওয়ায় স্থানান্তরিত করা হয়, তাঁর বেতন অর্ধেক করা হয়, পদোন্নতি এবং ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। চার সন্তানকে নিয়ে গোটা পরিবার আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন। সমাজ জগেশ্বরের পরিবারকে ঘুষখোর পরিবার হিসেবে নিন্দা করতে থাকে। স্কুলের ফি বকেয়া থাকায় শিশুদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়। প্রতিবেশীরাও পরিবারের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। অবসর গ্রহণের পর, জগেশ্বরের পেনশনও বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবারকে সাহায্য করার জন্য, তিনি একজন প্রহরী হিসেবে কাজ করতেন এবং ছোটখাটো চাকরি করতেন।