আগের বছরের থেকে শিক্ষা, এই জেলায় দুর্গাপুজোয় নিষিদ্ধ হল চীনা এলইডি ডিসপ্লে বোর্ড, নেপথ্যে বড় কারণ...
আজকাল | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: নিম্নচাপের ভ্রুকুটিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে আবারও বাঙালি মেতে উঠেছে নিজেদের প্রিয় শারদোৎসবে। জেলা থেকে শহর,মুখ ঢেকেছে ব্যানার আর রকমারি আলোকসজ্জায়। দ্বিতীয়া থেকে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ভিড় জমাচ্ছেন উৎসুক দর্শনার্থীরা। এরই মাঝে আলোকসজ্জায় কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করল মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ। কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্যই জেলা পুলিশের তরফে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এবছর দুর্গাপুজোয় ব্যবহার করা যাবে না কোনওরকম চাইনিজ এলইডি ডিসপ্লে বোর্ড। মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই জেলার সমস্ত পুজো উদ্যোক্তা, ডেকোরেটর মালিক ও আলোকসজ্জা সরবরাহকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এবছর চাইনিজ এলইডি ডিসপ্লে বোর্ডের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদি কোনও উদ্যোক্তা এর পরেও এই ধরনের বোর্ড ব্যবহার করেন তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে পুলিশ। প্রসঙ্গত, চাইনিজ এলইডি লাইটের এই ইলেকট্রিক ডিসপ্লে বোর্ডগুলোতে কী ধরণের লেখা দেখা যাবে তা একটি মোবাইল ফোন অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপে গিয়ে যা লিখে দেওয়া হয়। সেই লেখাই ভেসে ওঠে আলোকসজ্জায়। আলোকসজ্জার তোরণে পুজো উদ্যোক্তাদের নাম ও বিজ্ঞাপন সংস্থার নাম বা বিশেষ বার্তা লেখার জন্য সাধারণত এই ধরণের বোর্ড ব্যবহার করা হয়।
সূত্রের খবর, অধিকাংশ জায়গায় এইসব বোর্ড ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট ৮ সংখ্যার 'পাসওয়ার্ড' দেওয়া থাকে, যা বহু বছর ধরেই ডেকরেটর বা আলোকসজ্জা সরবরাহকারীরা ব্যবহার করে থাকেন। অনেক ডেকরেটর বা মালিকরা পুজোর উদ্যোক্তাদের জন্য মন্ডপ তৈরি করার পর তাঁদের ফোনে নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে দেন এবং তাঁদেরকে সেই পাসওয়ার্ড দিয়ে দেন। সেই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ফোনের অ্যাপ্লিকেশনে ঢুকে ক্লাবের সদস্যরা যে সমস্ত বার্তা লিখে দেন তাই ফুটে ওঠে আলোকসজ্জার মাধ্যমে। তাই বলাই বাহুল্য, এই পাসওয়ার্ডগুলো খুবই সহজলভ্য এবং যে কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে এই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ডিসপ্লে বোর্ডে নিজের মনের মতো কিছু লিখতেই পারেন। প্রসঙ্গত, গতবছর কার্তিক পুজোর সময় মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় এমনই একটি লাইট বোর্ডে বিশেষ একটি কুরুচিকর মন্তব্য ফুটে ওঠাকে কেন্দ্র করে ঘটে যায় বিশাল কান্ড। এলইডি বোর্ডের অ্যাপের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে কুরুচিকর মন্তব্য লেখা হয়েছিল সেই বোর্ডে। তারপর সেটির ভিডিও তুলে কোনও ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় তা প্রকাশ করে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করেন। যা নিয়ন্ত্রণে আনতে যথেষ্টই বেগ পেতে হয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশকে। তাই এবছর এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তাই আগে থেকেই তোড়জোড় শুরু হয়েছে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
জেলা পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজ জানিয়েছেন, 'সমস্ত থানার পুজো কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোথাও কোনও ডিজিটাল এলইডি ইলেকট্রিক ডিসপ্লে বোর্ড ব্যবহার করা যাবে না।' বিশেষ করে বেলডাঙা , শক্তিপুর এবং সংলগ্ন এলাকায় যাতে এই ধরনের বোর্ড কোনওভাবেই ব্যবহার করা না হয় সেজন্য পুলিশের তরফে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যেকটি থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক, সংশ্লিষ্ট এলাকার ভারপ্রাপ্ত ডিএসপি এবং এসডিপিওদের উপস্থিতিতে নিজেদের এলাকার পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বসে বৈঠক সেরেছেন। বৈঠকে তাঁদের পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, চাইনিজ এলইডি ডিসপ্লে বোর্ডের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুজো উদ্যোক্তাদের এটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে , এরপরেও যদি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোনও দুর্গাপুজো উদ্যোক্তা নিজেদের মন্ডপে এই ডিসপ্লে লাইট ব্যবহার করেন তাহলে সেই পুজো কমিটির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সূত্রের খবর, আসন্ন দুর্গোৎসবে যাতে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তার জন্য মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার সুপার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সমস্ত থানার আইসি, ওসি, এসডিপিও এবং ডিএসপিদের নিয়ে বৈঠক করে এই ধরনের বোর্ড ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর পাশাপাশি দর্শনার্থীদের সুরক্ষার জন্যও পুলিশের তরফে একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গত বছরের বেলডাঙার ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিয়েছি। এইভাবে একটি মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশন হ্যাক করে ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে কোনও অসাধু ব্যক্তি অশান্তির পরিবেশ তৈরি করতে পারে সেটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। কিন্তু এখন আমরা জেনে গিয়েছি এই পাসওয়ার্ড খুবই সহজলভ্য এবং তা ব্যবহার করে যেকোনও ধরনের লেখাকে আলোকসজ্জার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। তাই অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্যই এই চাইনিজ এলইডি ডিসপ্লে বোর্ডগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু ডেকরেটর বা আলোকসজ্জা সরবরাহকারীদেরই নয়, পুজো মন্ডপের উদ্যোক্তাদের এই বিষয়ে সচেতন থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ জেলার একটি বড় দুর্গাপুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা তথা তৃণমূলের বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন,'জেলা পুলিশ আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য যা পদক্ষেপ নেবে আমরা তাকে সমর্থন করব। উৎসবের দিনগুলোতে যাতে কেউ কোনও অশান্তি পাকানোর সুযোগ না পায়, সেই দিকে আমরাও সজাগ থাকছি।'