• ভবানীপুরের ৭৫ পল্লির দুর্গোৎসবে “বিনোদিনী”-র আবির্ভাব
    আজকাল | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় থিমপুজো হিসেবে খ্যাত ভবানীপুরের  ৭৫ পল্লি এ বছর পদার্পণ করল ৬১তম বর্ষে। আজ, বুধবার, রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলেন এই বর্ণাঢ্য দুর্গাপুজোর। এ বছরের থিম “বিনোদিনী”—ঊনবিংশ শতকের পথপ্রদর্শক নাট্যশিল্পী ও মহিলা অভিনয় জগতের আইকন নটি বিনোদিনীর জীবন ও সৃজনকে কেন্দ্র করে।

    উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র, কাউন্সিলর পাপিয়া সিংহ সহ বহু কৃতী ব্যক্তিত্ব। পুজো কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বছরের থিমের মাধ্যমে তাঁরা শুধু শিল্পী বিনোদিনীর জীবনগাথাই তুলে ধরতে চাননি, বরং নারী শক্তির প্রতীক হিসেবেও তাঁকে উদযাপন করছেন।

    ৭৫ পল্লির প্যান্ডেল এ বছর এক অভিনব আখ্যানের জগৎ তৈরি করেছে। আলো-আঁধারি, সৃজনশীল মঞ্চসজ্জা, স্থাপত্যশৈলী এবং শব্দ-আলোয় মিশ্রিত শিল্পকর্মের মধ্য দিয়ে বিনোদিনীর জীবনযাত্রা—তাঁর শৈশব থেকে রঙ্গমঞ্চে উত্থান, সাংস্কৃতিক মহারথীদের সঙ্গে সংযোগ এবং শেষপর্যন্ত আধ্যাত্মিক অন্বেষণ—সবটাই ধাপে ধাপে দর্শকদের সামনে মেলে ধরা হয়েছে। শিল্প নির্দেশনা করেছেন অভিজিৎ নন্দী, আর প্রতিমা নির্মাণ করেছেন পরিচিত শিল্পী পরিমল পাল। প্রতিমার আকারে-আকৃতিতেই ধরা পড়েছে নারীর অদম্য জেদ ও আত্মপ্রত্যয়ের প্রতীক। দেবী দুর্গার রূপ এখানে যেন বিনোদিনীর আত্মশক্তির প্রতিফলন।

    ১৮৬২ সালে জন্মানো বিনোদিনী দাসী সমাজের নানা বাঁধা ও কুসংস্কার উপেক্ষা করে বাংলা নাট্যমঞ্চে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। গিরিশচন্দ্র ঘোষের শিষ্যত্বে তিনি অভিনয় করেন ৮০-রও বেশি নাটকে। চৈতন্য লীলা, সীতার বনবাস, মেঘনাদবধ প্রভৃতি নাটকে তাঁর অসামান্য অভিনয় শুধু দর্শকের হৃদয় জয় করেনি, বরং সমকালীন বিদ্বজ্জনেরা— বঙ্কিমচন্দ্র  চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব—তাঁর প্রতিভায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর আত্মজীবনী আমার কথা আজও বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ, যেখানে এক নারীশিল্পীর সংগ্রাম ও সাফল্যের প্রতিচ্ছবি মেলে।

    কমিটির সম্পাদক সুবীর দাস জানান, “আমরা গর্বিত যে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং আমাদের ৬১তম দুর্গাপুজো উদ্বোধন করেছেন। এ বছরের থিম ‘বিনোদিনী’ কেবলমাত্র একটি শিল্পসম্মত শ্রদ্ধাঞ্জলি নয়, বরং এও একটি বার্তা—নারীর সাহস, সংগ্রাম ও সৃজনশীলতার কাহিনি চিরকাল অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”

    মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে উদ্বোধনের পরই কার্যত আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হল উৎসবের আবহ। ৭৫ পল্লি দুর্গোৎসব কমিটি কলকাতাবাসী ও বহিরাগত দর্শনার্থীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে—তাঁরা এসে যেন প্রত্যক্ষ করেন এই অভিনব শিল্প-সন্ধানী প্যান্ডেল ও থিমপুজো। “বিনোদিনী”-র আলোয় আলোকিত ৭৫ পল্লির দুর্গোৎসব তাই শুধু পুজোর আনন্দ নয়, এক অনন্য সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারকে নতুন করে আবিষ্কারের আয়োজন।
  • Link to this news (আজকাল)