আজকাল ওয়েবডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করলেই অ্যান্টি-ন্যাশনাল! আর ক্রমেই লম্বা হচ্ছে অ্যান্টি ন্যাশনাল-এর তালিকা। সমাজমাধ্যমে ডানপন্থী ট্রোলদের আক্রমণের লক্ষ্য এখন বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুক। অথচ কয়েক বছর আগে তিনিই যখন সরকারের প্রশংসা করছিলেন, তখন তাঁকেই মাথায় তুলে যাচ্ছিলেন তারা। এবার ‘থ্রি ইডিয়টস’ খ্যাত সেই সোনমের বিরুদ্ধে উঠল লাদাখ বিদ্রোহে মদত দেওয়ার অভিযোগ।
রীতিমতো বিবৃতি জারি করে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে লাদাখে যে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে তার নেপথ্যে অন্যতম কারণ সোনমের উস্কানিমূলক মন্তব্য। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জেন-জিদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে শান্ত লাদাখ। এই বিদ্রোহের মূল কারণ দীর্ঘদিন একটানা কেন্দ্রীয় শাসন। যখন কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়া হয় তখনই লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করে কেন্দ্র। এরপর কাশ্মীরে নির্বাচন হলেও লাদাখ থেকে গিয়েছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবেই। লাদাখের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে দিনের পর দিন দিল্লির শাসন-এ তিতি বিরক্ত সাধারণ মানুষ।
বিশেষ করে প্রান্তিক উপজাতির মানুষ এবং স্থানীয় মূলনিবাসী মানুষদের মধ্যে পুঞ্জিভূত হচ্ছিল ক্ষোভ। এই ছবিটি বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সাম্প্রতিক এই আন্দোলনে। প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত চারজন বিক্ষোভকারী আহত বহু। ঘটেছে পাথর নিক্ষেপ এবং অগ্নি সংযোগের ঘটনাও। স্থানীয় মানুষদের আক্রমণের অন্যতম মূল লক্ষ্য ছিল বিজেপি পার্টি অফিস এবং বিজেপি কর্মীরা।
কিন্তু মৃত্যু মিছিলের পরেও গোটা বিষয়টিকে নিয়ে নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে নারাজ কেন্দ্রীয় সরকার। উল্টে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ এবং দেশবিরোধী শক্তি লাদাখের যুবসমাজকে ভুল পথে চালিত করছে এবং তারই মূল্য চোকাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আর সেই ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে সোনমের নাম।
কিন্তু রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, বারবার সরকার বিরোধী বিক্ষোভ আন্দোলনকে দেশবিরোধী বলে আখ্যা দেওয়ার এই প্রবণতা আদেও কি রাজনৈতিক কিংবা প্রশাসনিকভাবে ফলপ্রসূ? বিজেপির অন্দরে খবর, সামনেই বিহার ভোট। এই অবস্থায় যদি আবার জাতীয়তাবাদ ইস্যু উস্কে দেওয়া যায়, তবে তার রাজনৈতিক ফায়দা মিলতে পারে শাসকদলের। কিন্তু এর বিরোধী মত রয়েছে দলের অন্দরেই। লাদাখ ইস্যুতে এখনও পর্যন্ত প্রধান বিরোধীদল জাতীয় কংগ্রেস সেই অর্থে কোনও রকম পক্ষ নেয়নি। বড় কোন বিবৃতি দেননি বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীও। ফলত গোটা বিষয়টিতে বিরোধীদের আক্রমণ করার খুব একটা সুযোগ পাচ্ছে না বিজেপি। বরং কোথাও গিয়ে প্রকাশ্যে চলে আসছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যর্থতার ছবিটি। ফলে এই ইস্যুটিকে সর্বভারতীয় স্তরের নিয়ে গেলে লাভের তুলনায় দলের ক্ষতিই বেশি হতে পারে বলে মত বিজেপি নেতাদের একাংশের। তবে বলা বাহুল্য বিজেপির যে কোনও সিদ্ধান্তই নেন মোদী-শাহ জুটি কাজেই তারা এই বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেবেন সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলবে দল।