বৃষ্টি-বিপর্যয়ে মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য, সিইএসসি ও পুরসভার কাছে রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সোমবার রাত এবং মঙ্গলবার ভোরে প্রবল বর্ষণের জেরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একাধিক মৃত্যুর ঘটনায় কড়া অবস্থান নিল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার স্বতঃপ্রণোদিত একটি মামলার শুনানিতে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি-র কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছে। আদালত জানিয়েছে, কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল এবং সংস্থা কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সেই সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে, শহরের নিকাশি ব্যবস্থার হাল এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে রিপোর্ট পেশ করতে হবে কলকাতা পুরসভাকেও। এর পাশাপাশি মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে অবস্থান জানাবে রাজ্য। আগামী ৭ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
সোমবার রাত ও মঙ্গলবার ভোরে প্রবল বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে পড়ে কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রবল বৃষ্টিতে যাদবপুর, পার্কসার্কাস, তারাতলা, একবালপুর, ভবানীপুর সহ সল্টলেক, উত্তর কলকাতার বড় অংশে জল দাঁড়িয়ে যাউ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শহর ও শহরতলিতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণ শহরতলির বিষ্ণুপুর ও নরেন্দ্রপুরের দুই যুবকও।
এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনায় সিইএসসি-কে সরাসরি দায়ী করে বলেন, ‘এখনই জরুরি ভিত্তিতে কর্মীদের নামান। শুধু ব্যবসা করছেন, আর পরিকাঠামো উন্নয়ন করছেন রাজস্থানে। কলকাতার দিকে কোনও নজর নেই।’ বুধবার ভবানীপুরের এক পুজো উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ‘সিইএসসি যদি মৃতদের পরিবারকে চাকরি না দেয়, তা হলে রাজ্য সরকারই পরিবারের এক জনকে চাকরি দেবে। হোমগার্ডে নিয়োগের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।’
এর পাশাপাশি রাজ্যের তরফে প্রত্যেক মৃতের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। সিইএসসি-র কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সিইএসসি-কে অনুরোধ করেছি যাতে পরিবারপিছু ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। যেহেতু দুর্ঘটনার মূল কারণ তাদের দায়বদ্ধতার অভাব।’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রকৃতির উপর তো আমাদের হাত নেই। তবে দীর্ঘদিন ধরে ফরাক্কা ব্যারেজ ও কলকাতা বন্দরে ড্রেজিং হয়নি। ফলে, বিহার-ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলেও জল এসে কলকাতায় জমছে। সবটাই আমাদেরই সামলাতে হচ্ছে।’
এই আবহেই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ এই ঘটনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, শহরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ঘটনার জন্য দায়ী সংস্থা ও প্রশাসনকে যথাযথ ব্যাখ্যা দিতেই হবে। এই ঘটনায় বিচার বিভাগীয় হস্তক্ষেপকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে তড়িদাহত হয়ে এতজনের মৃত্যুর ঘটনায় বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আর্জি, পুজোর সময় যাতে খোলা তার এ দিক ও দিক না পড়ে থাকে, আর যেন প্রাণ না যায়। আজ মামলাটি শুনবে আদালত।
এদিকে বৃহস্পতিবার, তৃতীয়ার রাত থেকেই ভিড় সামলাতে তিলোত্তমার পথে নেমেছে পুলিশ। পুজোয় যদি বৃষ্টিতে জল জমে, তা তাড়াতাড়ি সরানোর জন্য ওয়ার্ড স্তরে পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে থানাগুলির তরফে। কীভাবে যান চলাচল ঘুরিয়ে দেওয়া হবে, তার জন্য স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছে ট্রাফিক পুলিশ। পুজোয় প্রত্যেক পুলিশকর্মী ও আধিকারিককে রেনকোট ও পর্যাপ্ত ছাতা নিয়ে ডিউটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।