‘অতি পিছড়া ন্যায় সংকল্প’ ঘোষণায় সামাজিক ন্যায়ের নতুন অঙ্গীকার
আজকাল | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে বিহারে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলানোর লক্ষ্যে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী এক জোরালো বার্তা দিলেন। বুধবার পাটনায় ‘অতি পিছড়া ন্যায় সংকল্প’ কর্মসূচি ঘোষণা করার পর, বৃহস্পতিবার ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি ফের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বললেন — বিজেপি যতই “মিথ্যা আর বিভ্রান্তি” ছড়াক না কেন, মহাগঠবন্ধন অতি পিছড়া শ্রেণি (EBC), দলিত, আদিবাসী, সংখ্যালঘু ও অন্যান্য পিছড়া জনগোষ্ঠীর পূর্ণ অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির (CWC) বৈঠক উপলক্ষে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং মহাগঠবন্ধনের গুরুত্বপূর্ণ শরিক আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। জনসভায় রাহুল গান্ধী একটি ১০ দফা ‘ন্যায় সংকল্প পত্র’ প্রকাশ করেন, যা তিনি বর্ণনা করেন “সামাজিক ন্যায় ও সমঅধিকারের নকশা” হিসেবে।
‘ন্যায় সংকল্প পত্র’-এর প্রধান অঙ্গীকারসমূহ
১. বেসরকারি শিক্ষায় সংরক্ষণ – বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষণ চালু করা হবে। পাশাপাশি বেসরকারি স্কুলগুলির সংরক্ষিত আসনের অর্ধেকই SC, ST, OBC ও EBC শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে।
২. ‘Not Found Suitable’ ধারার বিলোপ – সংরক্ষিত শ্রেণির যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি থেকে বঞ্চিত করার বিতর্কিত ধারা বাতিল করা হবে।
৩. EBCs সুরক্ষা আইন – দলিত ও আদিবাসীদের জন্য বিদ্যমান SC/ST অত্যাচার প্রতিরোধ আইনের ধাঁচে, EBC সম্প্রদায়কে বৈষম্য ও হিংসা থেকে রক্ষার জন্য আলাদা আইন প্রণীত হবে।
৪. স্থানীয় শাসনে বাড়তি কোটা – পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সংস্থাগুলিতে EBC-র অংশীদারি ২০% থেকে বাড়িয়ে ৩০% করা হবে।
৫. সরকারি চুক্তিতে সংরক্ষণ – ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারি ঠিকাদারিতে SC, ST, OBC ও EBC সম্প্রদায়ের জন্য ৫০% কোটা বরাদ্দ থাকবে।
৬. ভূমির অধিকার – জমিহীন পরিবারগুলিকে শহরে তিন ডেসিমাল ও গ্রামে পাঁচ ডেসিমাল জমি প্রদান করা হবে।
রাহুল গান্ধী তাঁর বক্তৃতায় শিক্ষাকে তুলে ধরেন সমাজ বদলের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে। তিনি বলেন, “এটা শুধু শিক্ষার লড়াই নয়, এটা সমতার লড়াই। সম্মান ও মর্যাদার লড়াই। প্রকৃত সামাজিক ন্যায় ও সমবন্টিত উন্নয়নের গ্যারান্টি।” বিহারের জাতিগত সমীকরণকে সামনে রেখেই এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। নীতীশ কুমারের সরকারের করা জাতি সমীক্ষা অনুযায়ী, অতি পিছড়া শ্রেণি (EBC) রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৩৬%। এতদিন এই ভোটব্যাঙ্ক মূলত জেডিইউ (JD(U)) ও নীতীশ কুমারের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
রাহুল গান্ধীর এই পদক্ষেপকে কংগ্রেসের এক অভূতপূর্ব কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে লক্ষ্য একদিকে মহাগঠবন্ধনের ভিত শক্ত করা, অন্যদিকে নীতীশ কুমারের প্রভাববলয়কে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানো। কংগ্রেসের এই পদক্ষেপ বিহারে জাতিগত রাজনীতির নতুন মোড় আনতে পারে। অনগ্রসর শ্রেণি, দলিত, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু শ্রেণির জন্য নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি কংগ্রেসকে ঐতিহ্যগত সমাজবাদী রাজনীতির কাছাকাছি নিয়ে গেছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটি মহাগঠবন্ধনের সবচেয়ে সাহসী ও সরাসরি জাতি-ভিত্তিক রাজনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।