সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: কেউ কাজ করেন বিদেশ মন্ত্রকে। কেউ স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা ইত্যাদিতে। কূটনৈতিক কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক বা ফাইলে মুখ গুঁজে নোট তৈরি, দিল্লিতে কর্মরত আমলারা খুব একটা ফুরসত পান না। তারই মধ্যে সারাদিন কাজের পরও বাঙালি আমলারা ব্যস্ত পুজোর আয়োজনে। অতি বর্ষার দাপটে যমুনার চরে এবার কাশফুল ফুটেও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে আয়োজনে ক্রটি নেই। হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ থেকে আনা হচ্ছে কাশফুল। হরিদ্বার থেকে গঙ্গাজল। পুজো আয়োজনে কোথাও ফুটে উঠছে পুরুলিয়ার ছৌ, কোথাও বিভিন্ন রাজ্যের মুখোশ। দিল্লিতে এবার ৩২৭টি আকর্ষণীয় পুজো হচ্ছে।
ইন্ডিয়া গেটের কাছে পাণ্ডারা পার্কে নয়াদিল্লি সর্বজনীন দুর্গাপুজা সমিতির প্যান্ডেল এবার সাজছে পুরুলিয়ার ছৌ মুখোশে। এই পুজোয় অনেক অফিসার জড়িত। মুর্শিদাবাদ থেকে আসছে শোলার কাজ। একচালার প্রতিমা সেজে উঠছে ঢাকের সাজে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অতসী চট্টোপাধ্যায় জানান, বাংলার কারিগরদের রোজগারের ব্যবস্থা করতেই আয়োজনের সিংহভাগ আসছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। ঢাকি থেকে প্রতিমার সাজ। পুজো উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। আসবেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর, পরিবেশমন্ত্রী ভুপেন্দ্র যাদব থেকে শুরু করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা। ঠাকুরের ভোগ রাঁধবেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সন্ন্যাসীরা।
বাঙালি আধিকারিকদের আয়োজনে দক্ষিণ দিল্লি রোহিনী পুজো সমিতিতে সপ্তমী থেকে নবমী হবে খাওয়াদাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজকদের ছেলেমেয়েরাই অংশ নেবে অভিনয়ে, গানে। জানালেন উদ্যোক্তা বিদেশমন্ত্রকের আধিকারিক স্বর্ণেন্দু সিনহা। রোহিনীরই প্রশান্ত বিহারে সমন্বয়ে’র পুজোয় একাদশ বর্ষের আয়োজনে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান থাকবে বলেই জানান অধ্যাপক নিরঞ্জন ভট্টাচার্য। কাশ্মীরি গেট পুজো সমিতির ১১৬ বছরের আয়োজন। একচালার ডাকের সাজের প্রতিমা তাদের।
চমকপ্রদ প্যান্ডেল হচ্ছে ময়ূর বিহার মিলনী কালচার-ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনে। আয়োজক তথা পূর্বাঞ্চল বঙ্গীয় সমিতির সম্পাদক মৃণালকান্তি বিশ্বাস জানান, বাংলার ছৌ, রাজস্থানের কালবেলিয়া, গুজরাতের কুকন এবং কেরলের কথাকলি, চার মুখোশের সারিতে সেজে উঠছে প্যান্ডেল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আসছেন মুম্বইয়ের জলি মুখোপাধ্যায়। মেহরলির আমরা সবাই পুজো সমিতি প্রতিবারের মতোই আয়োজন করেছে ঘরোয়া পুজোর। গ্রেটার নয়ডার আনন্দধারা বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনও তাই। বনেদি বাড়ির পুজোর আদলে হবে প্যান্ডেল। একইভাবে বঙ্গীয় ঐক্য সম্মিলনীর আয়োজনে ময়ূর বিহার পুজো সমিতির আয়োজনও আকর্ষণীয়। কর্মব্যস্ততার ফাঁকে দিল্লির বাঙালিদের আয়োজন কোনওভাবেই পিছিয়ে থাকছে না। যতই হোক, সম্বৎসরের উৎসব বলে কথা।