নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: পুরনো সিগন্যাল ব্যবস্থাতেই গোলযোগ হয়েছিল। সময়মতো মান্ধাতা আমলের সিগন্যালিং ব্যবস্থা কাজই করেনি। তারই ফলস্বরূপ গত বছর নভেম্বর মাসে হাওড়ার কাছে নলপুরে বেলাইন হয় সেকেন্দ্রাবাদ শালিমার সাপ্তাহিক সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। বরাতজোরে অবশ্য প্রাণে বেঁচে যান ওই ট্রেনের সমস্ত যাত্রী। কিন্তু ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। ওই দুর্ঘটনার প্রায় এক বছর পর রেলের তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। সরকারি সূত্রে খবর, রিপোর্টে রেলের তদন্তকারী আধিকারিকরা উল্লেখ করেছেন, ওই সিগন্যালিং ব্যবস্থা প্রায় দু’দশকের পুরনো। ১৯৯৯ সালে তার কাজ হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে রেলের যাত্রী সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। অত্যাধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থার গালভরা ঘোষণা কি শুধুমাত্র কাগজে-কলমেই রয়ে গিয়েছে? এই ইস্যুতে শুরু হয়েছে চর্চা।
রিপোর্টে উঠে এসেছে, সেকেন্দ্রাবাদ শালিমার সাপ্তাহিক সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেন মেন লাইন ধরেই এগচ্ছিল। সেইমতো ট্র্যাক চেঞ্জিং পয়েন্টও ওই ট্রেনের লোকো পাইলট পেরিয়ে যান। আচমকাই অন্য লাইনে চলে যাওয়ার সিগন্যাল পান চালক। হঠাৎ করেই রেল লাইন পরিবর্তন করতে গিয়ে ওই ট্রেনের তিনটি যাত্রীবাহী কামরা বেলাইন হয়ে যায়। তদন্তে উঠে এসেছে, সিগন্যালিং সিস্টেমে ভুল করে বার্তা চলে গিয়েছিল। আর তা হয়েছিল সিগন্যালিংয়ের যন্ত্রাংশে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক রেলকর্মীর আচমকা ধাক্কা লাগার ফলে। সরকারি সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, তদন্তে রিপোর্টে রেলের আধিকারিকরা সাফ জানিয়েছেন, মান্ধাতা আমলের সিগন্যালিং ব্যবস্থা রয়েছে বলেই এটি হয়েছে। অন্যথায় এই পরিস্থিতি হতো না। ভুলবশত যন্ত্রাংশে ধাক্কা লেগে লোকো পাইলটের কাছে অন্য ‘কম্যান্ড’ চলে যেত না। পাশাপাশি সিগন্যালিং ব্যবস্থায় যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবকেও দায়ী করা হয়েছে রেলের রিপোর্টে।
এর ফলে সামগ্রিভাবেই যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে বাড়ছে চিন্তা। কারণ আর মাসকয়েকের মধ্যেই শীত পড়বে। বিশেষত উত্তর ভারতে ঘন কুয়াশার জেরে বিপর্যস্ত হতে শুরু করবে ট্রেন পরিষেবা। যাত্রীদের দুর্ভোগ তো অব্যাহত থাকবেই। কিন্তু এরই সঙ্গে নিজের নিরাপত্তা নিয়েও যথেষ্ট আশঙ্কায় রয়েছেন যাত্রীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, এমনিতেই সিগন্যালিং ব্যবস্থায় গোলযোগের
ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে। ঘন কুয়াশায় তো সিগন্যাল দেখাই যাবে না। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ফগ ডিভাইস যন্ত্র কেনা হলেও এক্ষেত্রে স্থায়ী সমাধানের সম্ভাবনা প্রায় নেই। রেল বোর্ড সূত্রে এমনই ইঙ্গিত মিলেছে। রেল সূত্রে দাবি, এই বছর তুলনায় আরও বেশি ফগ ডিভাইস যন্ত্র কেনার পথে হাঁটতে পারে মন্ত্রক। প্রসঙ্গত, গতবার ১৯ হাজার ৭৪২টি ফগ ডিভাইস কেনা হয়েছিল।