বাংলাদেশি চিহ্নিত হওয়ার আতঙ্ক ভুলে গুরুগ্রামে দুর্গাপুজোয় সম্প্রীতির মেজাজ
বর্তমান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: বছর দু’য়েক আগে গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে ভেঙেছে এলাকার একাধিক ঝুপড়ি। রেহাই পায়নি বস্তির ছোট ছোট বাড়ি। পুড়ে গিয়েছে আয়ের একমাত্র পথ দোকানঘরও। সেই ক্ষত এখনও দগদগে। সম্প্রতি বাংলাভাষীদের ধরপাকড়ের আঁচও প্রবলভাবে লেগেছে এই এলাকায়। পুলিসি হয়রানির জেরে কার্যত সহায়সম্বলহীন হয়ে দীর্ঘদিনের মাথা গোঁজায় আশ্রয়টুকু ছাড়তে হয়েছে সেখানকার বাঙালি শ্রমিকদের। তবুও সাধারণ মানুষের পারস্পরিক বিশ্বাসে তার বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। সেই বার্তাই দিচ্ছে গুরুগ্রাম সেক্টর ৪৯-এর বেঙ্গলি মার্কেট লাগোয়া বাদশাপুরের ‘আমরা কয়েকজন’-এর দুর্গাপুজো। বিজেপি শাসিত হরিয়ানার ‘সাইবার সিটি’ হিসেবে পরিচিত গুরুগ্রামে ছোটবড় মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৪০টি পুজো হয়। ধারে এবং ভারে হয়তো এইসব পুজোর কাছাকাছিও আসতে পারবে না সেক্টর ৪৯-এর বেঙ্গলি মার্কেট লাগোয়া পুজোটি। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে যেভাবে মণ্ডপে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হচ্ছে, তা আগামীদিনে শিক্ষণীয় হয়ে থাকতে পারে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
সেক্টর ৪৯-এর বেঙ্গলি মার্কেট এলাকা মাত্র মাসদু’য়েক আগেও ছিল বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে আতঙ্কের আর এক নাম। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে সেখান থেকে একের পর এক বাংলাভাষী বাসিন্দাকে আটক করার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি সরকারের পুলিসের বিরুদ্ধে। সেক্টর ৪৯ সংলগ্ন বাদশাপুর এলাকায় বছর দু’য়েক আগেও ভয়াবহ গোষ্ঠী সংঘর্ষ বেধেছিল। কার্যত প্রাণ বাঁচানো দায় হয়ে উঠেছিল স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি অংশের। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে এখানেই পুজোয় মেতেছে ‘আমরা কয়েকজন’এর সদস্যরা। প্রত্যেকেই অবশ্য আর্থ-সামাজিক দিক থেকে প্রান্তিকস্তরের মানুষ। কিন্তু তা দুর্গাপুজোয় কোনওরকম অন্তরায় হয়ে ওঠেনি। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের রোগজার বাঁচিয়ে আয়োজিত এই পুজোয় হিন্দুদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন মুসলমানরাও। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা শ্রীনিবাস দোলুই বললেন, ‘এটা তো কোনও রেজিস্টার্ড ক্লাব নয়। তাই খাতায় কলমে এই পুজোর অস্তিত্ব খুঁজে পাবেন না। আমরা কয়েকজন মিলে এই পুজোর শুরু করেছিলাম। এলাকায় সেই নামই পরিচিতি পেয়ে গিয়েছে।’ পুজো শুরু হয়েছে সবে বছরপাঁচেক। সম্পর্কিত একাধিক বাধাবিঘ্নতেও তা বন্ধ করেননি আয়োজকরা।
বাংলা ও বাংলাভাষী বিতর্কের জেরে এই বছর পুজো আদৌ হবে কি না, সেই দুশ্চিন্তা ছিল। কিন্তু বরাবরের মতোই পাশে দাঁড়িয়েছেন এলাকার সংখ্যালঘুরা। এলাকার বাসিন্দা আমিনুল হক বললেন, ‘ওরা চাঁদা নিয়ে গিয়েছে। ওদের বলেছি, পুজোয় কোনও ঘাটতি থাকা চলবে না। আমরাও হাত লাগাব।’ পুজোর সঙ্গে যুক্ত রামকৃষ্ণ মাইতি বললেন, ‘আমিনুল, জাহাঙ্গিররাও পুজোয় অংশগ্রহণ করে। প্রসাদ খেয়ে যায়।’ আগের বছরের বেঁচে যাওয়া অর্থ এবং চাঁদার পাশাপাশি কিছু ধারবাকি করে বড়জোর লাখখানেক কিংবা খানিক বেশি টাকার সংস্থান হয় পুজোর জন্য। চোখ ধাঁধানো জাঁকজমকে তাই বিশ্বাসী নয় শ্রীনিবাস, আমিনুলরা। স্বল্প সাধ্যে পুজোর যাপনে মেতে উঠতেই তাঁরা বরং অনেক বেশি আগ্রহী।