রবীন রায়, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ার-২ ব্লকের ভাটিবাড়ি বোরাগাড়ি হরিমন্দিরে উমা আসেন রাজবংশী বধূর সাজে। ভক্তদের দেওয়া মায়ের গয়না সারা বছর লকার বন্দি থাকে। পুজো এলে লকার থেকে সেই গয়না বের করে উমাকে সাজানো হয়। ভাটিবাড়ির রাজবংশীদের এই পুজোয় মা মৃন্ময়ীকে পাঁঠা, হাঁস ও পায়রার মাংসের ভোগ দেওয়া হয়। মায়ের পুজো হয় মন্দিরের জমির ফসল বিক্রি করে।
হরিমন্দিরের দুর্গাপুজো এবার ১২৫ বছরে পা দিল। এখন মন্দির পাকা করার কাজ চলছে। ছাদ ঢালাই হচ্ছে। নির্মীয়মাণ মন্দিরেই মায়ের মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছে। ১২৫ বছর আগে ভাটিবাড়ি তল্লাটের জমিদার ছিলেন দ্বীপচান দাস। তিনি ও তাঁর দুই স্ত্রী গিরিবালা এবং নানবালা ভাটিবাড়ি বোরাগাড়ি হরিবাড়ি মন্দিরের পত্তন করেন। মন্দির তৈরির জন্য জমি দান করেন তৎকালীন ইংরেজদের নিয়োগ করা বিটবাবু চ্যামটা রায়।
ইংরেজরা গ্রামের নজরদারির জন্য চৌকিদার রাখত। গ্রামের এই চৌকিদারকে তখন বলা হতো বিটবাবু। জনশ্রুতি আছে যে, সেই সময় ভাটিবাড়ি তল্লাটে চৌকিদার চ্যামটা রায় ছিল দোর্দণ্ডপ্রতাপ। তাঁর নাম শুনলে সেই সময় বাঘে গোরুতে একঘাটে জল খেত। জমিদার দ্বীপচান ও তাঁর স্ত্রীরা হরিবাড়ি মন্দিরের নামে ফসল চাষের জন্য জমিও দান করে গিয়েছিলেন। সেই দান করা জমির ফসল বিক্রি করেই মন্দিরে সারা বছর পুজো অর্চনা হয়। দুর্গাপুজোও হয়।
মন্দির কমিটির সম্পাদক বীরেন্দ্রনাথ দাস বলেন, সম্পূর্ণ রাজবংশী আচার নিয়ম মেনে আমাদের এখানে মৃন্ময়ী দেবীর পুজো করা হয়। রাজবংশী বধূর সাজে মাকে সাজানো হয়। মাকে দেওয়া ভক্তদের সোনার গয়না লকারে রাখা হয়। পুজো এলে মাকে সেই গয়না পরানো হয়। পুজোর পরে মায়ের গয়না ফের লকারে রেখে দেওয়া হয়।
হরিবাড়ি মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক সময় উত্তরবঙ্গ কাঁপানো গুণেশ্বর অধিকারীর যাত্রাপালা ‘ময়নার চক্ষুর জল’। এই যাত্রাপালার মহড়া এই মন্দিরেই হয়েছিল। জনশ্রুতি আছে যে ভাটিবাড়ি অঞ্চলের যে কোনও গানের দল বাইরে অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার আগে এই বোরাগাড়ি হরিমন্দিরে মহড়া দিয়ে যেত। এমনই মাহাত্ম্য জড়িয়ে আছে এই মন্দিরের। হরিমন্দির দুর্গাপুজো কমিটির সম্পাদক প্রদীপ দাস বলেন, পাঁঠা, হাঁস ও পায়রার মাংসের ভোগ ছাড়া আমাদের এখানে মায়ের পুজো হয় না। অষ্টমী, নবমী ও দশমী তিনদিনেই মায়ের নামে বলি দেওয়া হয়। - নিজস্ব চিত্র