নিউ জামালদহ টি গার্ডেনের দুর্গাপুজো শ্রমিক পরিবারের মিলনক্ষেত্র
বর্তমান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রামকৃষ্ণ বর্মন মেখলিগঞ্জ
সবুজে ঘেরা চা বাগানের নির্জনতা ভেঙে বাজছে ঢাকের বাদ্যি। শ্রমিকদের ক্লান্ত জীবনে আনন্দের ঝলক নিয়ে হাজির হয়েছেন মা দুর্গা। কোচবিহার জেলার ক্ষুদ্র জনপদ জামালদহ এখন দুর্গোৎসবের উৎসবে মুখর। শহরের থিম পুজোর চাকচিক্য এখানে না থাকলেও আছে আন্তরিকতার ছোঁয়া আর মানুষে মানুষে মিলন। সেই আবেগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে নিউ জামালদহ টি গার্ডেনের দুর্গোৎসব। এই পুজো এবারে ষষ্ঠ বর্ষে পড়ল।
চ্যাংরাবান্ধার সরকার পরিবার ২০২০ সালে প্রথমবার চা বাগানে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন। সেই থেকে জনপ্রিয়তা বাড়তে বাড়তে আজ জামালদহের গণ্ডি ছাড়িয়ে দূরদূরান্ত থেকেও ভিড় জমছে এই পুজোতে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ। সেই খিচুড়ির স্বাদ নিতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। উদ্যোক্তারা বড়সড় প্যান্ডেল বেঁধে আলাদা কাউন্টার খুলে এই প্রসাদের ব্যবস্থা করেন। রান্নার দায়িত্বও থাকে পেশাদার রাঁধুনিদের হাতে।
পুজোর মূল উদ্যোক্তা উত্তম সরকার বলেন, আমাদের এই পুজো মূলত মিলনমেলা। এখানে শহরের চাকচিক্য নেই, কিন্তু একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া আর আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার আবেগ আছে।
শুধু উৎসব নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতাও মেনে চলে এই পুজো। প্রতিবছর সরকার মেডিকেল ও উত্তম অ্যান্ড ব্রাদার্সের পক্ষ থেকে দুঃস্থদের জন্য নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এবছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। পুজোর ক’দিন সরকার পরিবারের সদস্যরা চ্যাংরাবান্ধা থেকে সপরিবারে এসে জামালদহের বাগানেই থাকবেন।
মেখলিগঞ্জ ব্লকের দুর্গোৎসবগুলির মধ্যে ধীরে ধীরে মধ্যমণি হয়ে উঠছে এই পুজো। প্রতিমা তৈরি করছেন হলদিবাড়ির শিল্পী, আর মণ্ডপ নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছেন জামালদহের শিল্পী শিপক বর্মন। উদ্যোক্তাদের অন্যতম পিয়ালী সরকার ও শ্রীনাথ সরকার বলেন, আমরা কোনও প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে নামিনি। এখানে মানুষ একত্রিত হয় আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য। এটাই আমাদের পুজোর বিশেষত্ব। নিউ জামালদহ টি গার্ডেনের দুর্গোৎসব আজ চা বাগান ও আশেপাশের গ্রামীণ সমাজের কাছে পরিণত হয়েছে আবেগ ও উৎসবের মিলনক্ষেত্রে। - নিজস্ব চিত্র।