• ভোগ রান্নার দায়িত্বে আফরিন, প্রস্তুতিতে মগ্ন মুজিবর, চাঁদ বাগদিরা
    বর্তমান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল  বর্ধমান

    এখন নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই শেখ ইজরায়েলের। বোধনের আর দেরি নেই যে। সময় নষ্ট করলে কাজ শেষ হবে না। মণ্ডপে সঠিক সময়ে প্রতিমার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তার আগে শেষ করতে হবে মণ্ডপ তৈরির কাজ। কৃষ্ণ ধরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মণ্ডপসজ্জার কাজ করছে সে। আফরিন খাতুনেরও ব্যস্ততার শেষ নেই। সে পুজোর আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে। ভোগের ব্যবস্থা তাকেই করতে হবে। চাঁদ বাগদি, মুজিবর রহমানরা অন্যান্য কাজ করছে। পুজো জমাটি করতে হবে, এটাই তাদের টার্গেট। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির গড়েছে বর্ধমান সংশোধনাগার। সব ধর্ম মিলেমিশে এখানে এক হয়ে গিয়েছে। তারা যেন বার্তা দিচ্ছে, ‘এটাই আমার দেশ। এখানে বিভেদ নেই। মানুষে মানুষে বিভাজন করা যায় না। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’।

    মুজিবর রহমান, আফরিন খাতুনরা কৃষ্ণ ধর বা চাঁদ বাগদিদের সঙ্গে মিলেমিশে শুধু পুজো করছে না, অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছে। চারদিন সংশোধনাগারে নানা অনুষ্ঠান হবে। সংশোধনাগারের প্রশিক্ষক মেহেবুব হাসান বলেন, এখানে সবাই পুজোর আনন্দে শামিল হয়। অনুষ্ঠানের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে মহড়া শুরু হয়েছে। গান, নৃত্য, নাটকের আয়োজন থাকছে। বন্দিরাই অনুষ্ঠান করবে। মণ্ডপসজ্জার কাজ শেষ পর্যায়ে চলছে। শোলা দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে। বন্দিদের হাতের কাজ অসাধারণ। তাদের ভাবনাতেই মণ্ডপ সেজে উঠছে। এই কয়েকটা দিন তারা অন্যভাবে সময় কাটায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর দিনগুলিতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা থাকে। স্পেশাল রান্নার কাজও তারা করে। পুজোর প্রস্তুতি প্রায় দেড় মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। বৈঠক করে শেখ ইজরায়েল, আফরিন খাতুনরা দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছে। আধিকারিকদের দাবি, আয়োজকরা সকলেই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এক সময় তাদের মন হিংস্র হয়ে উঠলেও এখন অনেকেই বদলে গিয়েছে। শুধু মানসিকতা নয়, ধারণাতেও বদল হয়েছে। সেই কারণে তাদের এই কাজ অনেককেই প্রভাবিত করছে। হয়তো অনেকের ধারণাও বদলে দিচ্ছে। 

    নজরুল ইসলাম লিখে গিয়েছিলেন, ‘মোরা এক বৃন্তে দু’টি কুসুম হিন্দু-মুসলমান। মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ’। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে সেই ভাবনায় আঘাত লেগেছে। রাজনৈতিক দলগুলি বিভাজনের মাধ্যমেই ফায়দা তুলতে মরিয়া। ফাটল ধরছে অনেক সম্পর্কে। তৈরি হচ্ছে অবিশ্বাস। সেই পরিস্থিতেই মুজিবর, কৃষ্ণরা যেন সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাইছে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। সেই শ্লোগানেই এখন মুখরিত সংশোধনাগার। এই স্লোগান গারদ পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ুক সমাজের প্রতিটি স্তরে। এমনটাই চাইছেন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন লোকজনরা।
  • Link to this news (বর্তমান)