নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণগঞ্জ: শরতের আকাশে মেঘের ভেলা, কাশফুলে ভরা মাঠ আর বাতাসে শিউলির মিষ্টি ঘ্রাণ। এসবের মাঝেই সীমান্তবর্তী কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের নাঘাটা গ্রাম এখন মেতে উঠেছে দুর্গোৎসবে। এবছর ৫৫ বছরে পা দিল নাঘাটা গ্রাম বারোয়ারির পুজো। দীর্ঘ বছর ধরে চলা এই পুজো কেবল এই গ্রাম নয়, আশপাশের গ্রামগুলির মানুষদের কাছেও অন্যতম বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে।
এবার নাঘাটা বারোয়ারি দর্শনার্থীদের জন্য এক অভিনব থিম নিয়ে এসেছে। দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে মহালয় থেকে মহাষ্টমী পর্যন্ত মায়ের আসন। মন্দিরের উঁচু গম্বুজ, প্রবেশদ্বারের নকশা, চত্বরের অলঙ্করণ সবকিছু নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করবে। মণ্ডপের সঙ্গে মানানসই আলোকসজ্জা মিলে গ্রামের চিরচেনা চেহারাকে বদলে দিয়েছে উৎসব নগরীতে। শক্তির প্রতীক মা কালী যেখানে পূজিত হন, সেই দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরে এবার বিরাজ করছেন মহাশক্তির রূপ মাদুর্গা। গ্রামবাসী এবং দর্শনার্থীরা একসঙ্গে সেই ঐশ্বরিক পরিবেশের স্বাদ গ্রহণ করবেন।
ক্লাবের সদস্য অজয়কুমার বিশ্বাস বলেন, পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে আমরা পুজো করে আসছি। এবছর দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের থিম করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার মানুষজনের দক্ষিণেশ্বরের মন্দির যাওয়ার সুযোগ সেভাবে হয় না। তাই এবার দুর্গাপুজোর থিমে সেটাই বেছে নেওয়া হয়েছে। এবছর পুজোর বাজেট প্রায় ৯ লক্ষ টাকা। গতবারের চেয়ে এবার বাজেট বৃদ্ধির ফলে থিম বাস্তবায়ন, আলোকসজ্জা এবং সাংস্কৃতিক আয়োজনে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। পুজোর চারদিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। স্থানীয় শিল্পীরা ছাড়াও গ্রামীণ সংস্কৃতির নানা দিক ফুটিয়ে তোলা হবে। দশমীর দিন সিঁদুর খেলা এবং মহা প্রসাদের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে এই জমজমাট আয়োজন।
নাঘাটা গ্রাম বারোয়ারির পুজো এর আগেও বিশ্ব বাংলা সম্মান অর্জন করেছে। সেই স্বীকৃতিকে ধরে রাখতে এবছরও নতুনত্ব ও চমক রয়েছে। ইতিমধ্যেই মণ্ডপে ভিড় জমাচ্ছেন গ্রামবাসী ও আশপাশের দর্শনার্থীরা। পুজোর দিনগুলিতে দর্শনার্থীদের ঢল নামবে বলে আশাবাদী পুজো উদ্যোক্তারা। এবছর নাঘাটা গ্রাম বারোয়ারীর পুজো শুধু এক ধর্মীয় আয়োজন নয়, বরং মানুষের মিলনমেলা, গ্রামীণ ঐতিহ্যের উদ্যাপন এবং ভক্তির প্রতীক। দক্ষিণেশ্বরের ছোঁয়ায় সীমান্তের এই গ্রাম নিঃসন্দেহে রাজ্যের প্যান্ডেল দর্শনের মানচিত্রে এক বিশেষ স্থান দখল করতে চলেছে।