• অটো-টোটোর দৌরাত্ম্য রুখতে যৌথ অভিযান
    বর্তমান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও হাওড়া: হাওড়া স্টেশন থেকে শিবপুর। সালকিয়া থেকে ময়দান। শহরের রাস্তা এখন বেআইনি টোটো ও অটোর দখলে। ফলে তীব্র যানজট তো বটেই, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না অটো কিংবা টোটোটিকে। এই দুই গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবার পাইলট প্রজেক্ট শুরু করছে জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দপ্তর ও হাওড়া সিটি পুলিশ।

    উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো দেদার টোটো বানিয়ে উপযুক্ত কাগজপত্র ছাড়াই সেগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে। এই মুহূর্তে হাওড়ায় কত লক্ষ টোটো চলাচল করছে, তার কোনও হিসেব নেই। বেলাগাম টোটোর দৌরাত্ম্যে রাশ টানতে মাস ছয়েক আগে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পরিবহণ দপ্তরের বৈঠক হয়। যদিও তাতে রফাসূত্র কিছুই বের হয়নি। তবে সম্প্রতি শহরের টোটোগুলিকে নির্দিষ্ট রুট বা জোনে ভাগ করার পরিকল্পনা করছে প্রশাসন। জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট এলাকায় টোটো চলাচলের জন্য ১৩৫টি রুট নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক গার্ড এলাকাতেই শুধুমাত্র চলতে পারবে সেই এলাকার টোটোগুলি। এরপর ধাপে ধাপে সেগুলোকে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় এনে বাহন পোর্টালে আপলোড করা হবে। গ্রামীণ এলাকার ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রিত হবে টোটো চলাচল। এক্ষেত্রে যে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় টোটো চালকের বাড়ি রয়েছে, তিনি শুধুমাত্র সেখানেই চালাতে পারবেন। তবে কাছেপিঠে কোনও হাসপাতাল, রেল স্টেশন কিংবা বাস টার্মিনাস থাকলে সেক্ষেত্রে খানিকটা ছাড় দেওয়া হবে। উৎসব ও পরীক্ষার দিনগুলোতেও ছাড় থাকবে। পুজো শেষ হলেই পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে নিবন্ধিকরণের কাজ ধাপে ধাপে শেষ করবে পরিবহণ দপ্তর।

    অন্যদিকে, হাওড়া শহরের বিভিন্ন রুটে ভিনজেলার অটো নিয়ে এসে অবৈধভাবে খাটানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, রেজিস্ট্রেশন ফুরিয়ে যাওয়া অটোতে ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য জায়গার লাইসেন্সপ্রাপ্ত অটোর নম্বর প্লেট। হাওড়া স্টেশন এলাকাতেই অবৈধ অটোর সংখ্যা সবথেকে বেশি। সেখানেই গজিয়ে ওঠা একশ্রেণির সিন্ডিকেট চক্রের মদতে নাকি চলছে বেআইনি অটোর দাপট। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁকরাইল, ধূলাগড়, হুগলির শ্রীরামপুর, চন্দননগর, রিষড়া, বকুলতলা সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সেখানকার লাইসেন্সপ্রাপ্ত অটোগুলোকে নিয়ে এসে হাওড়ার একাধিক রুটে চালানো হচ্ছে। সিন্ডিকেটের তরফে কেউ একজন অটোর মূল মালিকের কাছ থেকে তাঁর গাড়িটি মাসিক নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে লিজ হিসেবে নিচ্ছেন। এরপর সেই গাড়িটি কাগজপত্র ছাড়া চলে যাচ্ছে থার্ড পার্টির হাতে। ফলে রুট পারমিট ছাড়াই অন্য জায়গার অটো চলছে হাওড়া শহরের সর্বত্র।

    পুলিশ জানাচ্ছে, অটোর নম্বর প্লেট দেখেই বোঝা যাচ্ছে সেটি বাইরের। এরপর কাগজ পরীক্ষার পর দেখা যায়, গাড়ির লাইসেন্স কিংবা রুট পারমিট অন্য জায়গার। শুধু তাই নয়, একটি অটোর নম্বর জাল করে অন্য অটোতেও বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে একই নম্বর প্লেটের একাধিক অটোর সংখ্যা বাড়ছে শহরে। এই ধরনের ঘটনা রুখতে গোলাবাড়ি ট্রাফিক গার্ড ও হাওড়া ব্রিজ ট্রাফিক গার্ডের তরফে শুরু হয়েছে পাইলট অভিযান। ইতিমধ্যেই প্রায় ৩০০টি বাইরের রুটের অটো ধরা পড়েছে। ১০ থেকে ১২টি অটো বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
  • Link to this news (বর্তমান)