ঋণ শোধ করতে মহিলাকে কিডনি বিক্রির চাপ, থানার দ্বারস্থ দম্পতি
বর্তমান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, হাওড়া: মাথায় মোটা ঋণের বোঝা। বাড়িতে পাওনাদারদের অত্যাচার। শুধু তাই নয়, ঋণ শোধ করতে নাকি স্থানীয় মহিলারা কিডনি বিক্রি করতে চাপ দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। ভয়ে বেশ কিছুদিন ঘরছাড়া ছিলেন দম্পতি। ঋণের টাকা শোধ না করায় তাঁদের তালাবন্ধ বাড়িতে ঢুকে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বিরুদ্ধে। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের শিয়ালডাঙা পঞ্চায়েত এলাকায়। প্রাণে বাঁচতে বুধবার রাতে থানার দ্বারস্থ হয়েছেন দম্পতি শান্ত সাঁতরা ও লিপিকা সাঁতরা। লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। দাবি করা হয়েছে, ৩ লক্ষ টাকা ঋণ নিলেও সুদে আসলে ৯ লক্ষ টাকা দাবি করা হচ্ছে। লিপিকা কাপড়ের ব্যবসা শুরু করবেন বলে বছর চারেক আগে ঋণদানকারী সংস্থা থেকে গ্রুপ লোন নেন। ব্যবসা ঠিকমতো না চলায় সেই ঋণ মেটাতে পারেননি তিনি। ঋণ শোধ করতে গ্রুপের অন্য মহিলাদের কাছ থেকেও চড়া সুদে টাকা ধার নেন লিপিকা। একসময় ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এরপরই শুরু হয় গ্রুপের মহিলাদের চাপ। ঋণের কিস্তি মেটাতে গ্রুপের মহিলারা অর্থাৎ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ নাকি লিপিকাদেবীকে তাঁর একটি কিডনি বিক্রি করার পরামর্শ দেন। তিনি কিডনি বিক্রি করতে রাজিও হয়ে যান। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে হাওড়ার একটি নার্সিংহোমে যান। তাঁর শারীরিক পরীক্ষাও হয়। কিন্তু পরে তিনি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। বিষয়টি জানতে পেরে গ্রুপের মহিলারা লিপিকাদেবীকে লাগাতার ফোনে হুমকি দিতে থাকেন। ভয়ে পরিবারটি বেশ কিছুদিন বাড়িছাড়া থাকে।
অভিযোগ, গত ২২ সেপ্টেম্বর গ্রুপের ঋণদাতা মহিলারা তাঁদের স্বামীদের সঙ্গে নিয়ে লিপিকাদেবীর বন্ধ বাড়িতে চড়াও হন। দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ঘরের আসবাব, বাসনপত্র, গ্যাস সিলিন্ডার, মাইক্রোওভেন সহ প্রায় সবকিছুই লুট করে নিয়ে যায়। ব্যবসার জন্য রাখা প্রায় ৮০ হাজার টাকার শাড়িও লুট করা হয়। বুধবার রাতে জগৎবল্লভপুর থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন লিপিকাদেবী। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, কিডনি বিক্রি করে ঋণ শোধ করে দেওয়ার পর হাতে কিছু টাকা থাকবে। কিন্তু জানতে পারি, আমার কিডনি বিক্রির টাকা অন্যের হাতে চলে যাবে। তাই পিছিয়ে এসেছিলাম।’ তাঁর অভিযোগ, ৩ লক্ষ টাকা ঋণ নিলেও গ্রুপের মহিলারা সুদে আসলে ৯ লক্ষ টাকা দাবি করছিল। ঋণদানকারী গ্রুপের মহিলাদের কয়েকজন বলেন, ‘আমরাও ঋণ করে ওই মহিলাকে টাকা দিয়েছিলাম। এখন বিভিন্ন সংস্থা আমাদের উপর দিনের পর দিন চাপ দিচ্ছে। আমরা টাকা শোধ করতে পারছি না।’ লিপিকাদেবীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে জগৎবল্লভপুর থানার পুলিশ। হাওড়া গ্রামীণ পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’ তবে আতঙ্কে রয়েছে সাঁতরা পরিবার। - নিজস্ব চিত্র