• দুর্গাপুজোর থিমে এক টুকরো গ্রাম থেকে বিদেশি স্থাপত্যের খণ্ডচিত্র
    বর্তমান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: দুর্গাপুজো মানেই থিমের ছড়াছড়ি। আলোর ঝলকের সঙ্গে প্রযুক্তির কারুকাজ। সেসবকে পিছনে ফেলে অন্যভাবে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে মধ্যমগ্রামে। মণ্ডপে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে হারিয়ে যাওয়া গ্রামের স্মৃতি। থাকছে কুলো, বাঁশের বেত, ধানের শিস, তালপাতার পাখা সহ অন্যান্য সামগ্রী। 

    এক সময়ে আমাদের জীবনের অঙ্গ ছিল যা, হারিয়ে যেতে বসা তা দিয়েই মণ্ডপ তৈরি করছে মধ্যমগ্রামের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীপুর দুর্গাপুজো কমিটি। মণ্ডপে প্রবেশ করলেই মনে হবে, যেন ফিরে গিয়েছি শৈশবের গ্রামে। মণ্ডপের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সাজানো হারিয়ে যাওয়া সেসব জিনিস, যা আজকের প্রজন্ম শুধুই গল্পে শুনেছে। উদ্যোক্তাদের কথায়, আমরা চাইছি মানুষকে তাঁদের শিকড়ের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। কুলো, বাঁশ বা ধানের শিস শুধু জিনিস নয়, সেইসব আমাদের আবেগ ও স্মৃতির। তাই এই কয়েকটি দিন নস্টালজিক হওয়ার জন্য এই উদ্যোগ। শ্রীপুর হাইস্কুলের মাঠেই তৈরি হচ্ছে এই মণ্ডপ। এনিয়ে পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা শুভ্রাংশু ঘোষ বলেন, আমরা শহুরে বাসিন্দা হলেও শিকড় গ্রাম। তাই সেই শিকড়কে মানুষের কাছে তুলে ধরতেই এই ভাবনা। আমাদের পুজোয় দর্শনার্থীরা শুধু দেবী দর্শন নয়, ফিরে পাবেন গ্রামকে। পাশাপাশি আমাদের পুজোয় খাওয়া দাওয়ার রেওয়াজ আছে। যেহেতু এটা পাড়ার পুজো, তাই অষ্টমীতে হয় নিরামিষ। এবার নবমীতে থাকছে চিকেন ও ভেজ বিরিয়ানি।

    প্রতি বছর থিমে চমক দেয় হাবড়ার প্রফুল্লনগরের আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র সমাবায় উপনিষদের পুজো। এবার মণ্ডপে তারা অভিনব থিম এনেছে। এই পুজো এবার পা রাখল ৭৫তম বর্ষে। দীর্ঘ ঐতিহ্যের এই পুজো এবার দর্শনার্থীদের উপহার দেবে এক অভিনব থিমের। স্পেনের বার্সেলোনার স্থাপত্য সাগরাদা ফামিলিয়াকে তারা তুলে ধরেছে থিম হিসেবে। মণ্ডপে প্রবেশ করলেই দর্শকদের সামনে ধরা দিচ্ছে সেই স্থাপত্য। থাকছে ৯০ ফুট লম্বা ও ৮০ ফুট চওড়া খিলান, জ্যামিতিক গম্বুজ, নকশা করা স্তম্ভ আর শিল্পসম্মত কারুকাজ। আলোকসজ্জার ছোঁয়ায় যেন রাতের অন্ধকারে জীবন্ত হয়ে উঠবে এই স্থাপত্য। বিদেশের শিল্পকলা আর বাংলার উৎসব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক অনন্য রূপকল্প। এ নিয়ে পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা সৈকত চক্রবর্তী বলেন, আমাদের এই পুজোর প্রতি মানুষের আলাদা আগ্রহ থাকে। তাই ৭৫ বছরে আমরা চমক দেওয়ার কথা ভেবেছি। সাগরাদা ফামিলিয়াকে আমরা বেছে নিয়েছি কারণ, এটি শুধু একটি স্থাপত্য নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মিলনের প্রতীক। এই থিম আগে কোথাও হয়নি বলেই আমাদের বিশ্বাস। প্রায় তিন মাস ধরে শিল্পীরা এই মণ্ডপ গড়ে তুলেছেন। কাঠ, প্লাই, ফাইবার, কাচ ও আলো দিয়ে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। থিম প্রতিমা এবং পরিবেশনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে দর্শকদের সামনে ধরা দিচ্ছে ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আর আমাদের পুজোর এবার বিশেষ আকর্ষণ থ্রি-ডি লাইটিং।
  • Link to this news (বর্তমান)