• সোনারপুরের মণ্ডপে পাখিদের কোলাহল, মোবাইলের প্রভাব
    বর্তমান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: মোবাইল টাওয়ারের প্রভাব নিয়ে সচেতনতা। সোনারপুরে এবার এই বিষয়ের উপর মণ্ডপ সাজাচ্ছে একাধিক পুজো কমিটি। কেউ আবার হারিয়ে যাওয়া পাখিদের থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে। প্যান্ডেলে প্রবেশ করতেই পাখিদের কিচিরমিচির স্বাগত জানাবে দর্শনার্থীদের।

    মহামায়াতলা (ইস্ট) মিলনি-র এটা ৭০ তম বছরের পুজো। তাদের থিম ‘উড়ব মোরা প্রাণ খুলে।’ শিশুমন ও পাখিদের মেলবন্ধনের এক বার্তা সকলের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছে তারা। পুজো কমিটির সম্পাদক প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, আমাদের সকলের বন্ধু পাখি। একদিকে শহরে মোবাইল টাওয়ার বসানোর মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তার বিকিরণ থেকে পাখিরা অসুস্থ হচ্ছে। অন্যদিকে, শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের প্রবণতাও বাড়ছে। ফলে তারাও শৈশব হারাতে বসেছে। এই পরিস্থিতি বদলানো দরকার। শিশু ও পাখি– দুইয়ের আজ প্রয়োজন একটু খোলা মনে হাত-পা ছড়ানো আর ওড়ার সুযোগ। এটাকেই মণ্ডপে তুলে ধরা হবে। এবার আমাদের পুজোর বাজেট ১০ লক্ষ টাকা।

    সোনারপুরের মিলনপল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি ৪২তম বছরে পা দিয়েছে। তারা এবার হারিয়ে যাওয়া পাখিদের তুলে ধরছে থিম হিসেবে। পুজো কমিটির সম্পাদক শঙ্কর ঘোষ বলেন, দিন দিন শহর থেকে ছোট ছোট পাখি বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তাদের নিয়েই এবার পুজোর ভাবনা তৈরি করা হয়েছে। মণ্ডপ জুড়ে থাকবে চড়ুই, বদ্রি পাখির ডাকের শব্দ। ছোট ছোট খাঁচা তৈরি করেও রাখা হবে বেশ কিছু পাখি। দর্শনার্থীরা মণ্ডপে ঢুকে পাখিদের কোলাহল শুনতে পারবেন।

    কোদালিয়া নেতাজি সঙ্ঘের এবারে থিমের নাম ‘বিমূর্ত’। তাদের এটা ৩৬ তম বর্ষ। পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা অর্কদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, এক অদৃশ্য শক্তি জীবন নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে আমাদের। অথচ সেটা আমরা জানি না। তাকে চিহ্নিত করতে হবে। এই ভাবনাই ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে মণ্ডপে। উদ্বোধনে চমক দিতে তৈরি এই পুজো কমিটি। বারুইপুরের পুরন্দরপুর শ্মশানের মহিলা ডোম টুম্পা দাসকে দিয়ে পঞ্চমীর দিন পুজো উদ্বোধন করানো হবে। তাদের বাজেট আট লক্ষ টাকা।

    বলাকা সংসদ ও পাঠাগার পরিচালনায় পূর্ব সোনারপুর সর্বজনীন দুর্গোৎসব ৬৩ তম বর্ষে পদার্পণ করল। তাদের এবারের ভাবনা ‘চেতনা’। উদ্যোক্তাদের দাবি, জীবজগতে মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য তার চেতনা। বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোনের জন্য সেটা বিপন্ন। কারণ আট থেকে আশি– প্রত্যেকেই আজ মোবাইল ফোনে কম-বেশি আসক্ত। এই মোবাইল ফোন ও নেটওয়ার্কের আগ্রাসী বিস্তারের জন্য পরিবেশও বিপন্ন। আমাদের আশেপাশের চেনা পাখিরা আসতে আসতে এগিয়ে চলেছে বিলুপ্তির পথে। কিন্তু মানুষ এনিয়ে অচেতন। এইসবই উপস্থাপন করা হবে মণ্ডপে।

    মানিকপুর অগ্রগামী সঙ্ঘের এবার ৮৭ তম বর্ষ। তাদের থিমের নাম সুখ-পাখি। একটি বিশাল আকারের হাঁসের আদলে তৈরি হচ্ছে প্যান্ডেল। পুজো উদ্যোক্তারা বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ ও বিভেদহীন সমাজ গড়ার বার্তা দেওয়া হবে এই থিমে। ১২ লক্ষ টাকা বাজেট ধরা হয়েছে এবার। থিম এবং সাবেকি ঘরানার মিশ্রণে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে এখানে।

    রাজপুর মহিলা মহল সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির এবার ২৬ তম বর্ষ। এই প্রথম তারা থিমের প্যান্ডেল তৈরি করছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি রুবি ভট্টাচার্য। এর নাম দেওয়া হয়েছে, ‘গৌরী এল ঘরে।’ গ্রাম্য পরিবেশের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। প্রায় তিন লক্ষ টাকা বাজেট ধরা হয়েছে এই পুজোর। চতুর্থীর দিন উদ্বোধন প্যান্ডেলের।
  • Link to this news (বর্তমান)