এই সময়: ডিভিসি–র জলাধার ও ফরাক্কা–সহ গঙ্গায় ড্রেজ়িং না–হওয়ার কারণে জলস্তর বৃদ্ধিকেই ‘মেঘভাঙা বৃষ্টি’তে কলকাতায় বিপর্যয় নিয়ে মঙ্গলবার দায়ী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ডের জল গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে এসে সব ভাসিয়ে দেয়। কেন্দ্রকে বারবার বলেও এই পরিস্থিতি বদলায়নি বলে বারবার অভিযোগও করেছেন তিনি। এই পরিস্থিতি যদি না–বদলায় এবং পশ্চিমবঙ্গের দিকে জল ঠেলে দেওয়া হলে বাংলা পাল্টা সেই জল যে দিক থেকে এসেছে, সেই দিকেই ঠেলে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নিউ আলিপুরে সুরুচি সঙ্ঘের পুজো উদ্বোধনে গিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মমতা বলেন, ‘যদি (কেন্দ্র সরকার) ড্রেজ়িং না করে, যদি আমি আপনাদের আশীর্বাদে (২০২৬–এ) ফিরে আসতে পারি, আমিও জানি হাও টু ট্রিট, বিকল্প কী ভাবে করতে হয়। আমার দিকে তুমি জল ঠেললে, আমি তোমার দিকে জল ঠেলে দেবো। সহজ অঙ্ক এটাই বলে। কারণ আমাদের তো বাঁচতে হবে।’
যদিও কোন মেকানিজ়মে উত্তরপ্রদেশ, বিহারের জল পুশ–ব্যাক করা যাবে, তা এ দিন খোলসা করেননি মুখ্যমন্ত্রী। ২০১১–তে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যে ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্প চালু হয়েছিল। সেই প্রকল্পে পাঁচ লক্ষ পুকুর কাটা হয়েছে। পাঁচশো চেক–ড্যাম তৈরি করা হয়েছে। এই উদ্যোগগুলির মাধ্যমে রাজ্যে সার্বিক ভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণের রূপরেখা তৈরি হলেও উত্তর ভারতের জল বাংলাকে ভাসিয়ে দিচ্ছে বলে মমতার বক্তব্য।
যদিও মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ মানতে নারাজ কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। তাঁর বক্তব্য, ‘কোন পদ্ধতিতে জল ঠেলে ফেরত পাঠানো যায়, আমার জানা নেই। যদি সেটা করা হয়, তা হলে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে বন্যার জন্য উনি দায়ী হবেন। উনি ড্রেজি়ংয়ের কথা বলছেন। কিন্তু কলকাতার নিকাশি নালার ড্রেজ়িং কি কেন্দ্র করবে? পূর্ব কলকাতার জলাভূমি বুজিয়ে দেওয়ার দায় কার?’ অতিবৃষ্টিতে জলভাসি কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ন’জনের মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। আইনজীবীদের দু’টি সংগঠন এই মামলা দায়ের করেছে। যদিও এই মামলাকারীদের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী।
মমতার কথায়, ‘তিনশো মিলিমিটার বৃষ্টি যদি হয়, আপনি কোথায় আটকাবেন? গঙ্গা ভর্তি, নালা ভর্তি, খাল, পুকুর ভর্তি। জল যাবে কোথায়? এর মধ্যে কোর্টে কেস করেছে জল কেন জমেছে? এটা (জল জমা) আমায় না জিজ্ঞেস করে তো আকাশকে জিজ্ঞেস করতে পারে! যাঁরা কেস করেছেন, তাঁরা তো কেন্দ্রকে জিজ্ঞেস করতে পারেন— তুমি (কেন্দ্র) কেন ড্রেজ়িং করোনি?’
কলকাতার জলভাসি ছবি নিয়ে বিজেপি, বাম–কংগ্রেস সহ বিরোধী শিবির কোমর বেঁধে নবান্ন ও পুরসভার সমালোচনা করেছে। এই বিরোধীপক্ষ মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছে বলে মমতার বক্তব্য। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘লন্ডনে ১০ দিন জল জমে থাকে। দিল্লিতে পাঁচ–ছ’দিন জল জমে থাকে। মহারাষ্ট্রেও থাকে, এটা ভুলে যাবেন না। উত্তরাখণ্ডে দুর্যোগে মৃত্যু হয়েছে। আমরা কিন্তু মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করি না। তোমরা জলে ভাসাও, আমরা জল তাড়াই।’