নয়াদিল্লি: প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান যদি প্রবীণ মা–বাবা দেখাশোনা না করেন, তা হলে সেই সন্তানকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার অধিকার রয়েছে মা–বাবার — সাম্প্রতিক একটি মামলায় এই কথা স্মরণ করিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ আদালত জানিয়েছে, প্রয়োজন মনে করলে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য আইনের আওতায় এমন নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালের।
২০০৭–এ পাশ হওয়া প্রবীণ নাগরিকদের ভরণপোষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ আইন অনুযায়ী অভিযুক্ত সন্তানকে নিজেদের সম্পত্তি থেকে উৎখাতও করতে পারেন বাবা-মা৷ আলোচ্য মামলায় দেখাশোনা না করায় নিজেদের বড় ছেলেকে সম্পত্তি থেকে উৎখাত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৮০ বছরের এক ব্যক্তি এবং তাঁর ৭৮ বছরের স্ত্রী৷ যদিও ওই প্রবীণ দম্পতির এই পদক্ষেপের উপরে বম্বে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ জারি করে৷ ফলে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যান। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং সন্দীপ মেহতা জানান, বৃদ্ধ বাবা-মা এবং প্রবীণ নাগরিকদের কল্যাণ এবং ভরণপোষণ আইন (২০০৭)-এর উদ্দেশ্যই তাঁরা যাতে শেষ জীবনে ভালো ভাবে যত্নে বাঁচতে পারেন তা নিশ্চিত করা৷ কোনও সন্তান অথবা আত্মীয় যদি প্রবীণ নাগরিকের প্রতি দায়িত্ব পালন না করেন, তা হলে তাঁকে সম্পত্তি থেকে উৎখাত করার অতীত উদাহরণও তুলে ধরে শীর্ষ আদালত৷ সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালেরও এই নির্দেশ দেওয়ার অধিকার রয়েছে বলে জানিয়ে দেন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি৷
আবেদনকারী প্রবীণ দম্পতির বড় ছেলে মুম্বইয়ে তাঁদের দুটি সম্পত্তির দখল নিয়ে নেন৷ কিন্তু বাবা মা উত্তরপ্রদেশ থেকে সেই বাড়িতে এসে থাকতে চাইলে তাঁদের সেখানে ঢোকার অনুমতি দেননি তিনি৷ সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, বাবা-মাকে তাঁদেরই সম্পত্তিতে ঢুকতে বাধা দিয়ে ওই দম্পতির বড় ছেলে তাঁর নিজের দায়িত্ব পালন করেননি৷ বিচারপতিরা জানান, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ওই বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে দম্পতির বড় ছেলেকে। দু’সপ্তাহের মধ্যে এই মর্মে লিখিত আকারে আদালতে জানাতে হবে তাঁকে।
২০২৩–এ জুলাইয়ে প্রথমে বয়স্ক বাবা-মায়ের সুরক্ষা সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন দম্পতি। দেখভাল বাবদ সন্তানের থেকে টাকা চেয়ে মামলা করেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। মুম্বইয়ের বাড়ি থেকে ছেলেকে বার করে দেওয়ার জন্যও আবেদন জানান তাঁরা। গত বছরের জুনে ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দেয়, মুম্বইয়ের ওই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে সন্তানকে। একই সঙ্গে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের জন্য মাসে ৩০০০ টাকা করে দেওয়ারও নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
পরে ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন বড় ছেলে। হাইকোর্ট জানায়, সন্তানকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের নির্দেশ ঠিক ছিল না। কারণ, এই মামলার ক্ষেত্রে দম্পতির বড় ছেলেও ষাটোর্ধ্ব। যদিও সুপ্রিম কোর্ট পর্যবেক্ষণে বলে, ২০২৩–এর জুলাইয়ে দম্পতির বড় ছেলের বয়স ছিল ৫৯ বছর। ফলে এই মামলায় তাঁকে প্রবীণ নাগরিক হিসাবে বিবেচনা করা যায় না।