রক্ষকই ভক্ষক! ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে মহিলা ইনফ্লুয়েন্সারের নাম-ঠিকানা বার করে এ কী করলেন পুলিশকর্মী? রাগে কাঁপছে নেটপাড়া...
আজকাল | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: গুরুগ্রামের এক নেট প্রভাবীর পিছু ধাওয়া করা এবং তাঁকে হেনস্থা করার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠল এক পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে। শিবাঙ্গী পেশওয়ানি নামে ওই তরুণীর একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে নেটমাধ্যমে। ভিডিওতে তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে অভিযুক্ত পুলিশকর্মী তাঁর গতিবিধির উপর নজরদারি চালিয়েছেন এবং ইনস্টাগ্রামে ক্রমাগত বিরক্তিকর ও অবাঞ্ছিত মেসেজ পাঠিয়েছেন।
শিবাঙ্গী জানিয়েছেন, ঘটনাটি ঘটে গত ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি সেসময় গুরুগ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত প্রায় ১২টা ৪৫ মিনিট নাগাদ তিনি লক্ষ্য করেন, তাঁর একটি ইনস্টাগ্রাম রিলে এক ‘মহিলা’ মন্তব্য করেছেন। ওই ‘মহিলা’ দাবি করেন যে, তিনি শিবাঙ্গীর গাড়ির নম্বর, তাঁর অবস্থান এবং গতিবিধি সম্পর্কে সব জানেন।
প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন কোনও মহিলা অনুরাগী পাগলামি করছেন। কিন্তু ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার পর শিবাঙ্গী জানতে পারেন যে ওই ব্যক্তি পুলিশে কর্মরত। শিবাঙ্গী বুঝতে পারেন, ওই দিন পুলিশের গাড়িতে থাকা এক পুরুষ অফিসারই তাঁর পিছু নিয়েছিলেন। ডিএম-এ (সরাসরি মেসেজ) কথা বলার সময় ওই ব্যক্তি স্বীকার করেন যে, তিনি গাড়ির নম্বর ব্যবহার করে শিবাঙ্গীর উপর নজর রাখছিলেন এবং তাঁর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল খুঁজে বের করেছেন।
শুধু তাই নয়, ওই পুলিশকর্মী এ-ও স্বীকার করেন যে, তিনি এক মহিলা পুলিশকর্মীর ভুয়ো প্রোফাইল ব্যবহার করছেন। তাঁর কথায়, ইনফ্লুয়েন্সারকে তাঁর ‘ভাল লেগেছে’ এবং তিনি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। তাই এই পন্থা অবলম্বন করেন তিনি।
শিবাঙ্গী বলেন, “এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, সরকার যাঁদের আমাদের সুরক্ষার জন্য নিয়োগ করেছে, সেই পুলিশের এক অফিসারই আমার গতিবিধির উপর নজর রাখছেন, আমার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করছেন এবং এই ভাবে মেসেজ করছেন।”
তিনি আরও জানান, ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। ওই অফিসার তাঁকে ক্রমাগত অবাঞ্ছিত ও বিরক্তিকর মেসেজ পাঠাতে থাকেন। এমনকী, তাঁর রিল দেখে তাঁর বয়স নিয়েও মন্তব্য করেন। শিবাঙ্গীর কথায়, “আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে এক জন পুলিশকর্মী কীভাবে আমাকে এমন মেসেজ করতে পারেন! তাঁদের তো আমাকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা।”
এই ঘটনার পর ওই পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন শিবাঙ্গী। তিনি জানান, গোটা সপ্তাহ তিনি চরম উদ্বেগের মধ্যে কাটিয়েছেন। ৮-৯ দিন পর পুলিশ অভিযুক্তকে শনাক্ত করে এবং শিবাঙ্গীকে এসএইচও-র সামনে ডেকে পাঠায়। কিন্তু শিবাঙ্গীর অভিযোগ, এসএইচও এবং অন্য এক অফিসার অভিযুক্তকে আড়াল করার চেষ্টা করেন। উল্টে তাঁকেই প্রশ্ন করা হয়, তিনি কেন এত বিরক্ত হচ্ছেন। তাঁদের মতে, ওই পুলিশকর্মীর কোনও খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না, তিনি কেবল বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিলেন।
শিবাঙ্গী প্রশ্ন তোলেন, “এটা কী ধরনের আচরণ? আমি কেন ছেড়ে দেব? এই বয়সে যদি আমাকে এ সব সহ্য করতে হয়, তা হলে অল্পবয়সী মেয়েদের কী অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়, তা ভাবুন!” তিনি আরও বলেন, “যাঁদের দায়িত্ব মানুষকে রক্ষা করা, তাঁদের থেকেই যদি নজরদারি এবং হেনস্থার ভয় পেতে হয়, তবে মহিলারা সুরক্ষিত থাকবেন কীভাবে?”
ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লেখেন, “এটা সরাসরি পিছু নেওয়া, হেনস্থা এবং পুলিশি ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়। এই লড়াই শুধু আমার একার নয়- এই লড়াই এটা নিশ্চিত করার জন্য, যাতে ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে কোনও মহিলাকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে না হয়।”
শিবাঙ্গীর এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নেটিজেনরা ওই তরুণীর সাহসের প্রশংসা করেছেন এবং অভিযুক্তকে আড়াল করার জন্য পুলিশের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেছেন। এক জন মন্তব্য করেছেন, “অবিশ্বাস্য! এত কিছুর পরেও বিষয়টিকে হালকা ভাবে নেওয়ার সাহস পুলিশ দেখায় কী করে... খুব ভাল করেছ যে অভিযোগ জানিয়েছ এবং বিষয়টি সকলের সামনে এনেছ।”
অন্য এক জনের মতে, “অন্য কিছু হলে হয়তো ব্লক করে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু যখন শুনলাম যে লোকটি আপনার গাড়ির নম্বর এবং আপনার পরিচয়পত্র পর্যন্ত খুঁজে বের করেছে, তখন একথা বলাই বাহুল্য যে তিনি সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং ঝুঁকিপূর্ণ।” আর এক জন লেখেন, “এটা মেনে নেওয়া যায় না। অভিযোগ দায়ের করে ঠিক কাজ করেছ। কারণ মেয়ে হিসেবে আমাদের এমনিতেই নানা অবাঞ্ছিত মেসেজের শিকার হতে হয়, কিন্তু এই ঘটনাটি অনেক বেশি গুরুতর।”