সোমবার রাতের ভয়াবহ দুর্যোগ কাটিয়ে ছন্দে ফিরছে শহর কলকাতা। হাঁটু বা কোমর জল থেকে নিস্তার পেয়েছেন শহরবাসী। এক রাতের বিপর্যয়ে কলকাতার সামগ্রিক চিত্র নিয়ে সরকারকে বিঁধতে ছাড়েনি বিরোধীরা। তবে সেসব সমালোচনা যে অর্থহীন, যুক্তি দেখিয়ে আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সুরুচি সংঘ থেকে তিনি বলেন, ‘এই বৃষ্টি নজিরবিহীন! মাইথন, পাঞ্চেত, ডিভিসি-র ছাড়া জলে আমরা ডুবে মরছি। কেন্দ্র বাঁধগুলির ড্রেজিং করে না বছরের পর বছর। নালা-নর্দমা, গঙ্গা, পুকুর উপচে পড়ছে। শহরের জল নামবে কী করে? সেই সঙ্গে দোসর গঙ্গার ভরা কোটাল। তবে বাংলা নৌকার মতো, সমস্ত প্রতিকূলতা সামলে ভেসে থাকে। দুর্যোগ সামলে আমরা ছ’ঘন্টার মধ্যে জল সরাতে সক্ষম হয়েছি।’
বিরোধীদের বিঁধে মমতার মত, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে গঙ্গা, নর্দমার জল বেড়ে গেলে মামলা কেন? তারা কি বুমেরাং বোঝে না? লন্ডন থেকে দিল্লি— সব বড় শহরেই এমন প্রবল বৃষ্টি ও প্লাবনের পর পুনরুদ্ধারে সময় লাগে। আমরা মৃত্যুর রাজনীতি করি না। ৫০০টি চেক ড্যাম নির্মাণ করেছি। দ্রুত খননে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তোমরা আমাদের জলে ভাসাও, আর আমরা জল তাড়াই। সাড়ে ৫ লক্ষ পুকুর কেটেছি, তাই জলটা বের করে দিতে পারি। বাংলায় বিনিয়োগ করা হয় না, মানুষ ভোগান্তিতে থাকে! তাদের কাছে সবটাই আত্মপ্রচার!’ তবে বাংলা কি বারংবার বানভাসি হবে? স্থায়ী সমাধান কি? মমতার স্পষ্ট মত, ‘আপনাদের আশীর্বাদে যদি আবার ফিরে আসতে পারি, বুঝিয়ে দেব কী করতে পারি। ওরা কিছু না করলে বিকল্প কী করা যায় দেখিয়ে দেব। আমাদের দিকে জল ঠেললে আমিও ওদের দিকে জল ঠেলে দেব। কত সহ্য করা যায়!’
আবারও জিএসটি-র হার হ্রাসে রাজ্যের ভূমিকা মনে করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরাই প্রথম জিএসটি-র বিরোধিতা করেছিলাম। এই কাটছাঁটের কারণে রাজ্যের কোষাগারে কুড়ি হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে। তবে আমার সমস্যা নেই, মানুষের জন্য সেই টাকা আবার ফিরিয়ে আনব। কেন্দ্র কীভাবে বিমার কথা বলে, যখন এক হাতে দেয় আবার অন্য হাতে কেড়ে নেয়? আমি বাংলার জন্য সবকিছু করি, কারণ আমি বাংলার মানুষ ও বাংলার জন্য বাঁচি।’ এদিনও বাংলা-বাঙালি ইস্যুতে কেন্দ্রকে বিঁধতে ভুলে যাননি মুখ্যমন্ত্রী। সুরুচি সংঘের পুজো উদ্বোধন করে ইতিহাস ঘেঁটে তিনি বলেন, ‘বাংলা না থাকলে স্বাধীনতা এবং নবজাগরণ আসত না। সেলুলার জেলের বাঙালি বিপ্লবীদের তালিকা এনে আমরা সংরক্ষণ করেছি। আমরা বহু ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছি। আমাদের ভাষাও যেন অপমানিত না হয়।’
প্রসঙ্গত, এদিন কালীঘাটে নিজ বাসভবন থেকে ৩০০ পুজোর ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেছেন মমতা। পাশাপাশি নবনীড় বৃদ্ধাশ্রমে উপস্থিত হয়ে সেখানের আবাসিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সামিল হন তিনি। গানে-গানে সুর মেলান আবাসিকদের সঙ্গে। সুরুচি সংঘের পুজোতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, বিধায়ক দেবাশীষ কুমার, পৌরমাতা জুঁই বিশ্বাস, টলিউডের ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস-সহ প্রমুখ। বৃদ্ধাশ্রমে তাঁর সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, ইন্দ্রনীল সেন-সহ প্রমুখ।