মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছেলেকে পড়ানোর ফাঁকে বোর্ড কেটে তৈরি করছেন রকমারি পাখি। ছাত্রছাত্রীদের চেনাতে হবে যে।
রান্না করার ফাঁকে বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত মেয়েকে নিয়ে কাগজ, রং দিয়ে তৈরি করেছেন নানা আনাজ। ছাত্রছাত্রীদের চেনাতে হবে যে।
ঘরের বাইরে কিছুটা ফাঁকা জায়গায় নানা রকম ফুলগাছ। এটাও ছাত্রছাত্রীদের চেনানোর জন্যই।
যাঁর সৌজন্যে খণ্ডঘোষের পাহাড়পুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র জেলায় ‘মডেল’ হয়েছে, তিনি ওই কেন্দ্রের কর্মী সুপ্রীতি কর্মকার। এ বছরে জেলা থেকে তাঁকে পুরস্কৃতও করা হয়েছে। জেলাশাসক আয়েষা রানি এ, প্রশাসনের অন্য কর্তাদের দাবি, ওই কেন্দ্রে ঢুকলে মনে হবে কোনও বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। খুবই মন ভাল করা পরিবেশ।
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র মানেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, খাবার, শৌচাগার নিয়ে নানা অভিযোগ। এক চিলতে জায়গা, খোলা আকাশের নীচে রান্নার মধ্যে আনাজ, ফুলের বাগান স্বপ্নের মতো। কিন্তু খণ্ডঘোষের সগড়াই মোড় থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জুবলি গ্রামের পাহাড়পুর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এটাই সত্যি। ওই কেন্দ্রের সহায়িকা শ্যামা মণ্ডল বলেন, “সুপ্রীতি এই কেন্দ্রে না এলে জানাই যেত না অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও এ রকম হয়! অল্প বেতন থেকেও কেন্দ্রের জন্য নানা ভাবে খরচ করেন তিনি।’’
ছাত্রছাত্রীদের জন্য পরিচয়পত্র তৈরি, নানা জিনিস চেনানো, ঈশপের গল্প কেন্দ্রের দেওয়ালে টাঙানোর জন্য ছবি আঁকার কাজ করেন সুপ্রীতি। এই কেন্দ্রে বালক-বালিকাদের খাবার জন্য চেয়ার-টেবিল, নির্দিষ্ট পোশাক রয়েছে। কেন্দ্রের সামনে আনাজ বাগানে ফলে পুঁইশাক, ঢেঁড়শ, লাউশাক। সে সব বিক্রি করে অনেক সময় মরসুমি আনাজ কেনা হয়। সুপ্রীতির কথায়, “এই বাগান গ্রামের লোকেরাই নজরদারি করে। আর বাড়িতে এলে আমার মেয়েও অঙ্গনওয়াড়ির কাজে নানা ভাবে সাহায্য করে।’’
এক অভিভাবক বন্দনা সিংহ বলেন, “এই কেন্দ্র নিয়ে আমরা গর্ব করি। ছেলেমেয়েরা বাড়ি ফিরতেই চায় না। পড়া-খেলা দুটোই হয়। খাবারের মানও ভাল। সবটাই হয়েছে ম্যাডামের জন্য।” পূজা সিংহ, চৈতালি সিংহরাও বলেন, “কেন্দ্রটাকে আগলে রেখেছেন ম্যাডাম। বাল্যবিবাহ আটকানোর জন্যও তিনি নিয়মিত আমাদের সচেতন করেন।”
আর সুপ্রীতি বলেন, “শিশুরা ফুলের মতো। এরা যাতে ঠিক মতো ফুটে ওঠে, সেটা দেখাটাই আমাদের কর্তব্য। আমার ছেলে-মেয়েদের যে ভাবে বড় করে তুলেছি, এদেরও সে ভাবেই বড় করার চেষ্টা করি।’’