আবর্জনায় মজে গিয়েছে খাল, বেআইনি নির্মাণেও বন্ধ গতি
আনন্দবাজার | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চাষবাস থেকে শুরু করে মাছ চাষ— সবটাই নির্ভর করত খালের জলের উপরে। এখন সে সব অতীত। শেষ কবে সংস্কার হয়েছিল খাল, মনে করতে পারছেন না এলাকার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করার ফলে মজে গিয়েছে খাল। তার উপরে, এলাকায় পিচবোর্ড কারখানার আবর্জনা, অন্যান্য আবর্জনা ফেলায় খালের গতিপথ আটকে গিয়েছে। এক সময়ে যে খালে জোয়ার-ভাটা খেলত, এখন তা বন্ধ। শুধু তাই নয়, খালের দু’পাড়ে গড়ে উঠেছে বেআইনি নির্মাণ। ফলে এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে।
এমনই অবস্থা ভাঙড় ২ ব্লকের পোলেরহাট খালের। খালটি ভাঙড়ের পাকাপোল থেকে উত্তর ২৪ পরগনার বোয়ালঘাটা হয়ে বিদ্যাধরী নদীতে গিয়ে মিশেছে। এক সময়ে খালের জলের উপরে নির্ভর করত এলাকার চাষবাস। টোনা, মাছিভাঙা, পদ্মপুকুর, শ্যামনগর, স্বরূপনগর, বোয়ালঘাটা, গাজিপুর নাটাপুকুর, স্বস্ত্যায়নগাছি, ভগবানপুর, জিরেনগাছা-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার কয়েকশো মানুষ ৪০০-৫০০ বিঘা জমিতে চাষ করতেন। এখন তা অতীত। এখন জমিতে শ্যালো মেশিন বসিয়ে চাষবাস করেন অনেকে।
পোলেরহাট ১ ও ২ পঞ্চায়েত, ভগবানপুর অঞ্চলের প্রায় হাজার বিঘা জমিতে মাছ চাষ হত। নিকাশি ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে, জোয়ার-ভাটা না খেলায় মাছ চাষ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এলাকার তৃণমূল নেতা তথা ভাঙড় ২ ব্লকের জয় হিন্দ বাহিনীর সভাপতি কাজি মোমিন বলেন, ‘‘এটা ঠিক যে ওই খালের উপরে নির্ভর করত এলাকার আনাজ ও মাছ চাষ। প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে ওই খাল শেষ বার সংস্কার হয়েছিল। এখন খাল মজে গিয়েছে। তা ছাড়া, খালপাড় জবরদখল করে বেআইনি নির্মাণ ও আবর্জনা ফেলায় নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অবিলম্বে ওই খাল সংস্কার করা প্রয়োজন।’’
এ বিষয়ে আইএসএফের জেলা পরিষদ সদস্য রাইনুর হক বলেন, ‘‘আমরা ছেলেবেলায় দেখেছি, ওই খালের জলের উপরে নির্ভর করত এলাকার চাষবাস। কিন্তু আজ সব বন্ধ। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের মদতে ওই খালের দু’পাড়ে গজিয়ে উঠেছে বেআইনি নির্মাণ। প্রশাসনকে বলব, অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’’
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বাহারুল ইসলাম বলেন, ‘‘ওই খাল সংস্কার করার জন্য বিভাগীয় দফতরের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। খালপাড়ে যাতে কোনও বেআইনি নির্মাণ না হয়, সে জন্য প্রশাসনকে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করব।’’
ভাঙড় ২ বিডিও পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘খাল সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানানো হয়েছে। তারা সার্ভে করেও গিয়েছে। এস্টিমেট করে পাঠিয়ে দিয়েছে। আশা করছি, দ্রুত কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি, খাল পাড়ের সৌন্দর্যায়নের কাজও হবে।’’