শিবির হলেও রক্তাল্পতা সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে, সমস্যায় বহু রোগী
আনন্দবাজার | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রক্তদান শিবির কম হচ্ছে, এমন নয়। কিন্তু উৎসবের মরসুমে রক্তের জন্য কার্যত হাহাকার শুরু হয়েছে ক্যানিং মহকুমা জুড়ে। কারণ, মহকুমা হাসপাতালের সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত রক্ত নেই। প্রতিদিন বহু থ্যালাসেমিয়া, কর্কট রোগে আক্রান্তদের ফিরতে হচ্ছে। সমস্যায় পড়ছেন অন্য রোগীরাও। প্রতি ইউনিট রক্তের জন্য এক জন করে রক্তদাতা নিয়ে না এলে মিলছে না রক্ত— এমনটাই অভিযোগ।
সমস্যার কথা মানছেন ওই হাসপাতালের ব্লাড সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মনোরঞ্জন মণ্ডল। তিনি জানান, বর্তমানে জরুরি প্রয়োজনের জন্য এক-একটি গ্রুপের মাত্র তিন-চার ইউনিট করে রক্ত মজুত থাকছে। শিবির থেকে রক্ত নেওয়ার জন্য ডাক আসছে না।
অথচ, অনেক ক্লাব-সংগঠনই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছেন। তা হলে সেই রক্ত যাচ্ছে কোথায়?
সূত্রের খবর, অনেক শিবিরের উদ্যোক্তারাই সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দিচ্ছেন না। তাঁদের পছন্দ বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক। কারণ, সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দিলে উদ্যোক্তারা ইউনিটপিছু ১০০ টাকা করে সরকারি সাহায্য পান। সেখানে বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক এক ইউনিট রক্তপিছু ৫০০-৬০০ টাকা দেয়। এর ফলেই সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক রক্তাল্পতায় ভুগছে। ক্যানিং মহকুমায় বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কও নেই।
গত রবিবার ক্যানিং মহকুমার বাসন্তী, গোসাবা মিলিয়ে অন্তত চারটি রক্তদান শিবির হয়। কিন্তু একটি শিবিরের উদ্যোক্তারাও ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে সংগ্রহ করা রক্ত দেননি। সেখানকার এক কর্মী বলেন, “শুধু মাত্র মোটা টাকার জন্যই উদ্যোক্তারা বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দিচ্ছেন। এ দিকে অসুস্থ মানুষজন রক্তের জন্য এই সরকারি হাসপাতালেই আসছেন। ফলে, বিরাট অভাব দেখা দিয়েছে। রক্ত নেই বললে রোগীর পরিবারের লোকজন ঝামেলাও করছেন।”
দু’দিন আগে ওই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত নিতে আসা এক রোগীর আত্মীয় নমিতা সাহা বলেন, “তিন দিন ধরে ঘুরছি। রক্ত পাইনি। আজ এক রক্তদাতা জোগাড় করে আনায় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত মেয়ের জন্য রক্ত পেলাম।”
মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মনোরঞ্জন মনে করেন, উদ্যোক্তাদের সচেতন হতে হবে। তবেই সমস্যা মিটবে। দীর্ঘদিন ধরে রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ক্যানিংয়ের বিনয় ভকত বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই মানুষকে সচেতন করছি। ক্যানিংয়ের রক্তদান শিবিরের উদ্যোক্তারা সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দিলেও বাসন্তী, গোসাবার মতো প্রত্যন্ত এলাকার উদ্যোক্তারা মোটা টাকার লোভে বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত দিচ্ছেন। কিন্তু সেই এলাকার মানুষ অসুস্থ হলেই আসছেন সরকারি হাসপাতালে।” বিনয়-সহ এই আন্দোলনে যুক্ত অনেকেরই দাবি, সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত পুজো কমিটিগুলি রক্তদান শিবির করুক সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ককে সঙ্গে নিয়ে।