• আগমনী দুর্গাপুজো: নরউইচের একমাত্র দুর্গোৎসব এ বার তৃতীয় বর্ষে
    এই সময় | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • চন্দ্রাণী নিয়োগী, নরউইচ

    ইংল্যান্ডের পূর্বপ্রান্তের একটি শহর নরউইচ। শরতের ঝরে পড়া ম্যাপল পাতার হাত ধরে সেখানেও পৌঁছে গিয়েছে দেবীর আগমনীর বার্তা।

    তিন বছর আগে গুটিকয় বাঙালি পরিবার মিলে তৈরি করেছিল নরউইচ বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন। প্রতি বছর এই ‘আগমনী’র দুর্গাপুজোয় শুধু বাঙালিরা নন, মিলিত হন ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রবাসীরা।

    নরউইচে দুর্গাপুজো এক দিনেই অনুষ্ঠিত হয়। পুজোর যাবতীয় আয়োজনে থাকে কয়েকটি বাঙালি পরিবার। যেহেতু পুজোর দিনগুলোতে অফিস, স্কুল সবই খোলা থাকে, তাই উইকেন্ড ছাড়া এখানে উপায় নেই। তাতে কখনও পুজোর দিন ঠিক হয় দশমীর পরে। এই বছর পুজো হবে ৪ অক্টোবর। কারণ প্রবাসে দুর্গাপুজোর দিনে ছুটি পাওয়া যায় না। সেই কারণে এক দিনেই দুর্গাপুজো হবে। বৈদিক কালচারাল সোসাইটি অফ ইস্ট আংলিয়া পরিচালিত হিন্দু মন্দিরে। এই মন্দিরে মা দুর্গার মূর্তি প্রতিষ্ঠিত। এক দিনেই অনুষ্ঠিত হয় এই দুর্গাপুজো। রীতি মেনে এখানে পুজো করেন লন্ডন থেকে আসা বাঙালি পুরোহিত তনয় মুখোপাধ্যায়। এই পুজোর মূল উদ্যোক্তা কয়েকজন তথ্য প্রযুক্তি চাকুরিজীবী। সারা বছর ধরেই অল্প অল্প করে দেশ থেকে নিয়ে আসা হয় পুজোর সব সামগ্রী। পুজোর জোগাড়, ভোগ রান্না, মন্দির সজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সব কিছু নিজের হাতে করেন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই।

    ষষ্ঠীর অঞ্জলি থেকে সিঁদুর খেলা এবং অবশেষে ভাসান নাচ। পুজোর ফাঁকেই চলতে থাকে বাচ্চাদের বসে আঁকো, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, থাকে জিভে জল আনা ফুড স্টল। রাতে থাকে ভোগের আয়োজন।

    এ বারের পুজোকে গৌরবান্বিত করতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ব্রডল্যান্ড ডিস্ট্রিক্টের কাউন্সিলর, নরউইচের লর্ড মেয়র, শেরিফ ও তাঁর স্ত্রী। এটা অবশ্যই স্থানীয় সমাজের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির সেতুবন্ধনের একটা সুন্দর সুযোগ।

    সকাল থেকে সন্ধ্যা, ছোট-বড় সকলে মেতে ওঠে বাঙালির প্রাণের উৎসবে। তবে উৎসবের মাঝেও থাকে মানবিকতার ছোঁয়া। ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে-এর সহযোগিতায় পুজো উদ্যোক্তারা ক্যান্সার গবেষণার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন। সমাজের প্রান্তিক মানুষ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করার চেষ্টা। গত বছর পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ ও সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়েছিল তাদের হাতে। এই বছরেও উৎসবের আনন্দকে ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি এই মহৎ কাজে সকলকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হবে।

    প্রবাসে দুর্গাপুজো মানেই সারা বছর অপেক্ষার শেষে ভেসে যাওয়া এক ভিন্ন আবেগে। দূরে থেকেও ঢাকের শব্দ, ধুনুচি নাচ আর অঞ্জলির ভক্তি আমাদের বাঙালি পরিচয়কে নতুন করে জাগিয়ে তোলে।

    মা শুধু বাংলায় আসেন না, তিনি প্রবাসের ঘরেও নিয়ে আসেন একতার আলো আর উৎসবের উষ্ণতা।
  • Link to this news (এই সময়)