এক ফালি শুকনো রাস্তায় দেরাজের পুরনো পোশাক, বয়ামের আচার বা রান্নার বড়ির মতো রোদ পোহাচ্ছে সারি সারি বই। কাছে গেলে বোঝা যায়, সদ্য প্রকাশিত নামী-অনামী পুজোসংখ্যার শবদেহ। শব শব্দটা অত্যুক্তি হল না। বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ঘুপচি দোকানে বই কারবারি তন্ময় কোলে একটি পত্রিকা তুলে দেখালেন, সাধারণ বই আর শারদসংখ্যার ফারাক।
নিউজ়প্রিন্টে ছাপা পুজোসংখ্যা বৃষ্টিতে ভিজলে অক্ষরের হরফ ধেবড়ে রং ওঠা পোশাকের মতো লাগে। আর্ট পেপারে ছাপা পত্রিকার পাতাও ভিজে পরস্পরের গায়ে লেপ্টে থাকে। পাতা খুললে ছেঁড়া, ছেঁড়া টুকরো উঠে আসে। এ বই শুকোতে দিলেও শবদেহে প্রাণ ফেরার আশা নেই। বুধবার বিকেলে বর্ণপরিচয় মার্কেটের উল্টো দিকে বিদ্যাসাগর টাওয়ারের নীচের ছবিটা দেখেও বইপ্রেমীদের চোখে জল আসবে। বাংলাদেশের অজস্র ধ্রুপদী বই বিকেলেও একতলার দোকানে ভাসছে। ভিতর দিকের দোকান থেকে সন্ধের মুখেও বালতি বালতি জল বাইরে ফেলা হচ্ছিল। বাইরের একটি বইয়ের দোকানের সামনে তখন গলা জড়াজড়ি করে পড়ে শঙ্খ ঘোষের ‘পুরনো চিঠির ঝাঁপি’, ‘মাটির চিত্রী রামকিঙ্কর’ এবং ব্রিটিশ আমলের বইয়ের পুনর্মুদ্রণ ‘স্বাধীনতার দাবি’।
কলেজ স্ট্রিট, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট ও লাগোয়া রাস্তাগুলিতেই দলা দলা পাঁক, কাদা, প্লাস্টিকের পাশে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বই থেকে রামকৃষ্ণ কথামৃত বা হলদেটে ইংরেজি পেপারব্যাক। কফি হাউসের পিছনের রাস্তা ঘেঁষা গলিও চৌবাচ্চাপ্রতিম। বই বিক্রেতারা বলছিলেন, আমপানে তা-ও প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু এই মেঘ-ভাঙা বিপর্যয়ে ঘুম ভেঙে উঠেই দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি। ফুটপাতের বেশির ভাগ দোকানেই তিন-সাড়ে তিন ফুট জল জমে ছিল এক দিনের কাছাকাছি। বড় দোকানগুলির ৮-১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতি হলে ছোট দোকানের ক্ষতিও লাখ দেড়েকের কম নয়।
প্ল্যাটফর্ম পত্রিকার সম্পাদক তন্ময়, তাঁর বন্ধু বিজয় দাসদের সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন পোড়খাওয়া প্রকাশক শুদ্ধব্রত দেব। তাঁর মুখেও ভাষা জোগাচ্ছে না। তন্ময়ের হাহাকার, ‘‘কেন যে আগের রাতেই বাংলা অক্ষর, হরফ নিয়ে হরপ্পা পত্রিকার ৪০ কপি শারদসংখ্যা স্টক করলাম। এক-একটি কপি ৬০০ টাকা। দেড়, দু’দিনেই ফাঁকা হয়ে যেত। সব জলে গেল।’’ অনেক পুজোসংখ্যার সম্পাদক-প্রকাশক লেখককে সৌজন্য সংখ্যা দিতে পারছেন না। বৃষ্টি সব খেয়ে নিয়েছে। কলুটোলার দিকে বঙ্কিমনারায়ণ রায় ওরফে তপনদার পুরনো বইয়ের দোকানেও শতকরা ৪০ ভাগ বই শেষ। তার মধ্যে গীতা থেকে কমিকস, সবই আছে।
প্রকাশক ও বই বিক্রেতা গিল্ডের কর্তা ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘বই বিক্রেতারাও এই অবস্থার জন্য দায়ী। রাস্তার ধারে টেবিল পেতে বা ট্রাঙ্ক সাজিয়ে অস্থায়ী দোকান। বিমা, লাইসেন্স নেই। বিপদে কে সামলাবে!’’ গিল্ডের আর এক কর্তা সুধাংশুশেখর দে-র কথায়, ‘‘কলেজ স্ট্রিটের জল জমার চিরকালীন সমস্যায় বর্ণপরিচয় মার্কেটের কথা ভাবা হয়েছিল৷ কিন্তু সেখানে ঠিকঠাক পরিকাঠামো গড়ে উঠল না।’’ কেন বইপাড়ায় প্লাস্টিক নিষিদ্ধ হল না? তন্ময়, বিজয়দের অভিযোগ, ‘‘রাস্তার ধারের স্টলই বইপাড়ার চিরকালী