• জলে ডুবে সম্পূর্ণ নষ্ট কয়েকশো গাড়ি, মাথায় হাত মালিকদের
    আনন্দবাজার | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • কোথাও গাড়ি ভাসতে দেখা গিয়েছে খড়কুটোর মতো। সেই অবস্থাতেই একটি গাড়ি আর একটিকে ধাক্কা মারছে। ভাসতে ভাসতেই কোনও গাড়ি ফুটপাতে উঠে গিয়েছে, কোনওটি চলে এসেছে মাঝরাস্তায় অন্য চলন্ত গাড়ির সামনে। বাস বা লরি গেলে পথে এমন ঢেউ উঠছে, যে মনে হচ্ছে, সবই ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। মঙ্গলবার শহর কলকাতার জল-যন্ত্রণার চেহারা ছিল এমনই।

    বুধ এবং বৃহস্পতিবার অধিকাংশ এলাকা থেকে জল নেমে গেলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। এখনও বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন। আবাসনের গ্যারাজ, পার্কিংয়ের জায়গায় জল থাকায় ডুবে রয়েছে বহু গাড়ি। পরিস্থিতি এমন যে, প্রায় ৫০০ গাড়ি ব্যবহারের অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানাচ্ছে গাড়ি মেরামতির সংস্থাগুলি। পুজোর আগে এ হেন পরিস্থিতিতে মাথায় হাত গাড়ির মালিকদের।

    বুধবার সকাল থেকে ভিআইপি রোড সংলগ্ন একটি গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থার মেরামতি কেন্দ্রে ভিড় ছিল বিকল হওয়া কয়েকশো গাড়ির। কর্মীরা গুনে শেষ করতে পারছেন না, কতগুলি গাড়ি পৌঁছেছে। এক কর্মী বললেন, ‘‘এ তো সামনে যা এসেছে। এর বাইরে কত যে ফোন এসেছে, ঠিক নেই।’’ একই চেহারা চেতলার কাছে একটি সংস্থার গাড়ি মেরামতি কেন্দ্রেও। সেখানকার এক কর্মীর কথায়, ‘‘দুপুর ২টো পর্যন্ত জলে বন্ধ হওয়া দেড়শো গাড়ি এসেছে।’’ একটি বিদেশি গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার (সার্ভিস) অমরদীপ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘জলে পুরো ডুবে গেলে গাড়ি টোটাল লসে চলে যায়। সে গাড়ি সারানো যায় না। এটা জানার পরেই ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক। কিন্তু বুঝতে হবে, গাড়ি সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেলে বিমার টাকা মিলবে।’’

    গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, জলে ইঞ্জিন বন্ধ হলে তো বটেই, জলের মধ্যে কিছু দূর চললেই গাড়ির ‘সার্ভিসিং কস্ট’ ১৫০০-২০০০ টাকা বেড়ে যায়। যে কোনও গাড়ির এ, বি এবং সি— তিনটি স্তরে ক্ষতি হতে পারে। গাড়ির বাম্পার ছুঁই ছুঁই জলে ক্ষতি হয় ‘এ’ পর্যায়ের। সেই মেরামতির খরচ কম। গাড়ির ইঞ্জিন ডুবে ক্ষতি হলে সেটি ‘বি’ পর্যায়ভুক্ত। গাড়িটি সম্পূর্ণ ডুবে গেলে ক্ষতি ‘সি’ পর্যায়ের ও তার খরচ সবচেয়ে বেশি। অমরদীপ বলেন, ‘‘ইঞ্জিন বিগড়োলে অন্তত ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ। বড় গাড়িতে তা আরও বেশি। সব ক্ষেত্রে বিমা সংস্থা টাকাও দেয় না।’’ তিনি জানান, বর্তমানে ‘বিএস-৬’ স্তরের যে সব গাড়ি বিক্রি হচ্ছে, সেগুলিতে বেশি মাত্রায় সেন্সর ব্যবহার হয়। এমন গাড়িই জলে সমস্যায় পড়ছে বেশি। জলে ইঞ্জিনের অংশ পড়ে থাকলে তাতে মরচেও ধরতে পারে।

    জমা জলে বিপদে পড়ার অভিজ্ঞতা সমাজমাধ্যমে লিখেছেন এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক। মঙ্গলবার রাতে কলকাতার একটি হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে মেদিনীপুরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। মা উড়ালপুলে ওঠার সময়ে তাঁকে এক জন পুলিশকর্মী বাধা দেন এবং অন্য পথে যেতে বলেন। সেই পথে জল ছিল। জলে যে পুলিশের একটি গার্ডরেল পড়ে রয়েছে, বুঝতে পারেননি চালক। গাড়ির চাকা তাতে আটকে বিকল হয়। রাত আড়াইটে থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত আটকে থাকেন রোগী। পরে অন্য অ্যাম্বুল্যান্সে রোগীকে পাঠিয়ে রেকার ভ্যানে অ্যাম্বুল্যান্সটি সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যেতে হয়। ওই চালক বলেন, ‘‘সার্ভিস সেন্টার বলেছে, ৯০ হাজার টাকা খরচ পড়বে।’’

    কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) ইলওয়াদ শ্রীকান্ত জগন্নাথ রাও বলেন, ‘‘খুবই খারাপ পরিস্থিতি হয়েছিল। অন্তত দুশোর উপরে বিকল হয়ে যাওয়া গাড়ি সরাতে হয়েছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)