• সাউথ সিটির পর এ বার ডায়মন্ড প্লাজ়া! কলকাতার আরও একটি মল কেনার পথে ব্ল্যাকস্টোন, কারা এই লগ্নিকারী সংস্থা?
    আনন্দবাজার | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সাউথ সিটির পর এ বার কলকাতার ডায়মন্ড প্লাজ়া শপিং মল কিনতে পারে আমেরিকার সংস্থা ব্ল্যাকস্টোন! গত জুন মাসেই সাউথ সিটি মল কিনেছিল সংস্থাটি। সূত্রের খবর, এ বার ডায়মন্ড প্লাজ়ার উপরেও নজর পড়েছে তাদের।

    গত মার্চ থেকেই বাজারে সাউথ সিটি মল বিক্রির জল্পনা ছড়াচ্ছিল। এর পর জুন মাসে সেই জল্পনা বাস্তবে পরিণত হয়। কলকাতার অন্যতম বৃহৎ মল সাউথ সিটি।

    দক্ষিণ কলকাতার বিলাসবহুল মলটির নির্মাণকারী সংস্থা ছিল সাউথ সিটি প্রজেক্টস। তাদের থেকে মোট ৩২৫০ কোটি টাকায় সেই মল কিনে নেয় ব্ল্যাকস্টোন। একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার কলম্বোয় সাউথ সিটি প্রজেক্টসের আবাসন প্রকল্পও কেনে আমেরিকার সংস্থাটি।

    ২০০৮ সালে চালু হওয়া সাউথ সিটি মল দেশের লাভজনক শপিং মলগুলির মধ্যে অন্যতম। এখানে বার্ষিক ১৮০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। রয়েছে শতাধিক বিপণি, রেস্তরাঁ, সিনেমাহল এবং গাড়ি রাখার জায়গা। বেশ কিছু কারণে সাউথ সিটি প্রজেক্টসের কলম্বোর আবাসন প্রকল্প বিরাট লোকসানের মুখে পড়েছিল। এর ফলে শপিং মলটি বিক্রি করতে বাধ্য হয় তারা।

    ভারতে অফিস, মল এবং হোটেল শিল্পে ইতিমধ্যেই ১.৭ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঢেলেছে ব্ল্যাকস্টোন। তবে দেশের ১৪টি শহরের অনেক শপিং মল হাতে থাকলেও, সাউথ সিটি মল কেনার আগে পর্যন্ত পূর্ব ভারতে কোনও বাণিজ্যিক প্রকল্প তাদের হাতে ছিল না। সাউথ সিটি মল কিনে সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ করেছিল ব্ল্যাকস্টোন।

    এ বার খবর, দমদম নাগেরবাজার এলাকার ডায়মন্ড প্লাজ়া হাতে নেওয়ার পথেও অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে ব্ল্যাকস্টোন। যদিও সরাসরি নয়, এই শপিং মলটিকে তারা ‘নেক্সাস সিলেক্ট ট্রাস্ট’ মারফত কিনতে পারে বলে সূত্রের খবর।

    ট্রাস্টটি ব্ল্যাকস্টোনের অধীনে থাকা একটি ‘রিয়্যাল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট’। অর্থাৎ জমি-বাড়ি-সম্পত্তিতে লগ্নি করে এই ট্রাস্ট। এটি বকলমে চালায় আমেরিকার সংস্থাটি।

    সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ডায়মন্ড প্লাজ়া হাতবদল হতে পারে মোটামুটি ৫৫০-৬০০ কোটি টাকায়। তবে চূড়ান্ত দাম নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গিয়েছে। শেষমেশ বিক্রয়মূল্যে খানিকটা পরিবর্তনও হতে পারে।

    ৩.৫ লক্ষ বর্গফুটের এই শপিং মলে রয়েছে নামীদামি বিপণি। সূত্রের দাবি, ইতিমধ্যেই নেক্সাস সিলেক্ট ট্রাস্টের কর্তাদের সঙ্গে ডায়মন্ড প্লাজ়া কর্তৃপক্ষের কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। ‍যদিও এ ব্যাপারে কোনও পক্ষই মুখ খোলেনি।

    উল্লেখ্য, সাউথ সিটি মল কেনার কথা প্রকাশ্যে আসার মাস চারেকের মধ্যেই সেটি বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। সেই কারণে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের ধারণা, ডায়মন্ড প্লাজ়ার বিক্রিও চলতি অর্থবর্ষের মধ্যেই শেষ হতে পারে। যদিও এই হাতবদল নিয়ে কোনও পক্ষ কিছু বলেনি।

    ডায়মন্ড প্লাজ়া শেষ পর্যন্ত নেক্সাস ট্রাস্টের হাতে গেলে কলকাতা তথা রাজ্যের দু’টি শপিং মলের মালিকানা পাবে ব্ল্যাকস্টোন। গোটা দেশের ১৯টি মল তাদের হাতে রয়েছে।

    ব্ল্যাকস্টোন ইনকর্পোরেটেড হল আমেরিকার একটি লগ্নিকারী সংস্থা। ১৯৮৫ সালে পিটার পিটারসন এবং স্টিফেন শোয়ার্জম্যান সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় তাঁদের হাতে ছিল চার লক্ষ ডলার (২০২৪ সালে ১২ লক্ষ ডলারের সমতুল্য)-এর মূলধন।

    মার্কিন আর্থিক পরিষেবা ও প্রাইভেট ইকুইটি সংস্থাটি গত তিন দশকে লেভারেজড বাইআউট (কোনও সংস্থাকে অন্য সংস্থা অধিগ্রহণের জন্য ধার দেওয়া)-এর বৃহত্তম বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অন্যতম।

    অন্য দিকে, সংস্থাটির রিয়্যাল এস্টেট ব্যবসাও সক্রিয়। বিশ্বব্যাপী অনেক বাণিজ্যিক রিয়্যাল এস্টেট অধিগ্রহণ করেছে ব্ল্যাকস্টোন।

    ক্রেডিট, পরিকাঠামো, হেজ ফান্ড, গ্রোথ ইকুইটি এবং বিমা সমাধানেও সক্রিয় আমেরিকার বহুজাতিক সংস্থাটি। ২০২৪ সালের মে মাসের হিসাবে ব্ল্যাকস্টোনের হাতে ১ লক্ষ কোটি ডলারেরও বেশি সম্পত্তি রয়েছে।

    ব্ল্যাকস্টোন মূলত একটি মার্জার এবং অধিগ্রহণ পরামর্শদাতা সংস্থা হিসাবে তৈরি হয়েছিল। ১৯৮৫ সালের শুরু থেকেই, শোয়ার্জম্যান এবং পিটারসন প্রাইভেট ইকুইটি ব্যবসায় হাত পাকানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় তহবিল সংগ্রহ। লেভারেজড বাইআউট নিয়েও কোনও ধারণা তাঁদের ছিল না।

    ১৯৮৭ সালের অক্টোবরে বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারে ধস নামে। এর পর ব্ল্যাকস্টোন তার প্রথম প্রাইভেট ইকুইটি তহবিলের জন্য তহবিল সংগ্রহ করে।

    এর পর ধীরে ধীরে ব্ল্যাকস্টোন অন্য ব্যবসাতেও প্রবেশ করে, বিশেষ করে বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায়। বর্তমানে সংস্থাটি বিশ্বের বৃহত্তম বিকল্প বিনিয়োগ সংস্থা (একটি বিকল্প বিনিয়োগ সংস্থা হল এমন একটি সংস্থা যা মূলধন স্টক, বন্ড এবং নগদ ব্যতীত যে কোনও সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করে)।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)