সোমবার রাতের কথা বলতে গিয়ে এখনও বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না গড়িয়ার কামডহরি সুভাষপল্লির বাসিন্দা মালতী দে-র। বছর পঞ্চাশের ওই গৃহবধূ জানালেন, এমন ভয়ানক বৃষ্টি আর এই পরিমাণ জমা জল আগে কখনও দেখেননি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় ৩০ বছর এখানে রয়েছি। টানা খুব ভারী বৃষ্টি হলে বড়জোর পায়ের পাতা ডোবার মতো জল জমতে দেখেছি। কিন্তু এ বার কী ভাবে কী হল, জানি না। বাড়ির সামনে কোমরজল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। সকালে উঠে এই অবস্থা দেখে তো বিশ্বাসই হচ্ছিল না।’’
আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেই রাতে কলকাতায় সব চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে গড়িয়ার কামডহরিতেই (পাঁচ ঘণ্টায় ৩৪০ মিলিমিটার)। শহর লাগোয়া এই এলাকা কলকাতা পুরসভার ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। বুধবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, দুর্যোগ কাটিয়ে উঠে দ্রুত ছন্দে ফিরছে এলাকা। জমা জল সরেছে প্রায় সব জায়গা থেকেই। পুজোর প্রস্তুতিও ফের শুরু হয়েছে এলাকায়। তবে তুমুল বৃষ্টির সেই অভিজ্ঞতা ভুলতে পারছেন না অনেকেই।
স্থানীয়েরা জানান, সে দিন সন্ধ্যার পর থেকেই ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। রাত যত বাড়ে, বৃষ্টির জোরও তত বাড়তে থাকে। রাত ১টার মধ্যেই এলাকার বহু রাস্তায় জল জমে যায়। আরও ঘণ্টা দুয়েক পরে তুমুল বৃষ্টির জেরে এলাকার অনেক বাড়ির ভিতরে জল ঢুকতে শুরু করে। কারও কারও ঘর, বারান্দাতেও জল ঢুকে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা অর্চনা দে বলেন, ‘‘রাতভর প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। ঘর থেকেই আওয়াজ পাচ্ছিলাম। তবে, প্রাথমিক ভাবে এত বড় দুর্যোগ বুঝতে পারিনি। সকালে জমা জলের পরিমাণ দেখে বুঝলাম, কিছু একটা হয়েছে। তার পরে টিভি দেখে জানলাম, আমাদের এখানেই নাকি সব চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে।’’ আর এক গৃহবধূ ঊষারানি দাসের কথায়, ‘‘রাতে ঘুমোতে গেলাম বাড়ির সামনে শুকনো রাস্তা দেখে। সকালে উঠে দেখি, কোমরজল। ভাবতেই অবাক লাগছে।’’ স্থানীয় ব্যবসায়ী বাপিচন্দ্র দে বলেন, ‘‘সকালে উঠে কোমরজল দেখে নিজেরাই যতটা পারি, ম্যানহোলের মুখ খুলে জল বার করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। পরে অবশ্য তাড়াতাড়িই জল নেমে গিয়েছে।’’
সেই রাতে সুভাষপল্লিতে পুজোর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি সন্দীপ দাস। তিনি বলেন, ‘‘অনেক রাত পর্যন্ত মণ্ডপে ছিলাম। তত ক্ষণে রাস্তাঘাটে জল জমে গিয়েছে। বাড়ি পৌঁছনোর পরে রাত ২টো থেকে বাসিন্দাদের ফোনআসতে শুরু করে। ঝড় হয়নি, বিদ্যুৎও যায়নি। তাই দুর্যোগের গভীরতাটা বুঝে উঠতে পারেননি কেউ। সকলেই ভাবছেন, বেহাল নিকাশির জন্য জল ঢুকছে। তাই কাউন্সিলরেরউপরেই যত রাগ এসে পড়ছিল। পরে অবশ্য মানুষ পরিস্থিতিটা বুঝতে পেরেছেন।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, কামডহরির বহু জায়গায় হাঁটু বা কোমর সমান জল জমলেও মঙ্গলবার বেলা বাড়তেই জল নামতে শুরু করে। দুপুরের মধ্যে অধিকাংশ জায়গা থেকেই জল নেমেছে। যদিও কিছু নিচু এলাকায় এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জল দাঁড়িয়ে ছিল।
খাস কলকাতা শহরের বহু জায়গা থেকে এ দিনও জল সরেনি। সেখানে সর্বাধিক বৃষ্টি হওয়ার পরেও কামডহরি থেকে এত দ্রুত জল নামল কী ভাবে? স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির দাবি, এর পিছনে রয়েছে গত কয়েক বছরের পরিকল্পনা। তিনি বলেন, ‘‘গত সাড়ে তিন বছর ধরে মাটির নীচের নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। তারই সুফল মিলেছে। পাশাপাশি, জল বার করতে ক্রমাগত বুস্টার পাম্প চালানো হয়েছে। নিচু এলাকা থেকে আলাদা করে ছোট পাম্প চালিয়ে জল বার করা হয়েছে।’’