• এখনও জলে ডুবে বহু আবাসন, দুর্ভোগ চরমে
    আনন্দবাজার | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • এ যেন আক্ষরিক অর্থেই নরক-যন্ত্রণা! বৃষ্টি থামার দেড় দিন পরেও কোথাও আবাসনের ভিতরে এখনও জমে হাঁটুজল, কোথাও জলে ভাসছে আবাসনের একতলার ঘর। সেখানে না আছে বিদ্যুৎ, না আছে পর্যাপ্ত পানীয় জল। শেষ কবে এমন পরিস্থিতি হয়েছিল, মনে করতে পারছেন না আবাসিকেরা। পুরসভার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন তাঁরা।

    সোমবার রাতভর মুষলধারে বৃষ্টির পরে মঙ্গলবার কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম দাবি করেছিলেন, আর বৃষ্টি না হলে জল দ্রুত নেমে যাবে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জল নামানোর চেষ্টা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। পুরসভাও আশ্বাস দিয়েছিল, বুধবার সকালের মধ্যে জল নেমে যাবে। যদিও বাস্তবে বৃষ্টি থামার ৪০ ঘণ্টা পরেও একাধিক এলাকায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ওই সমস্ত এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুরপ্রতিনিধিদের বার বার ফোন করা সত্ত্বেও জল নামানোর উদ্যোগ চোখে পড়েনি। জল বিপদসীমার উপরে থাকায় বহু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করা যায়নি। আবাসিকদের প্রশ্ন, পুরসভা কী করছে?

    এ দিন মেয়র বলেন, ‘‘আবাসনগুলির নিজস্ব কোনও নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় এই সমস্যা হচ্ছে।’’ পুরসভার দাবি, কর্মীরা দিন-রাত কাজ করছেন। জল নামাতে পাম্প ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও এ দিন দুপুরে ই এম বাইপাসে সার্ভে পার্ক থানা এলাকার একটি বহুতল আবাসনে গিয়ে দেখা গেল, ভিতরে হাঁটুর উপরে জল। গাড়িগুলি অর্ধেক ডুবে রয়েছে। জল না কমায় বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়নি। বার বার জানানোর পরেও পুরসভা কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় আবাসিকেরা নিজেদের উদ্যোগেই পাম্পের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁদের অনেককেই দেখা গেল, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে ভরে আবাসন ছাড়ছেন। মঙ্গলবার ভোর থেকেই আবাসন বিদ্যুৎহীন। ফলে, অনেকেই সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পারেননি। শকুন্তলা চন্দ্র নামে এক আবাসিক বললেন, ‘‘এখানকার ৬০ শতাংশ বাসিন্দাই প্রবীণ। অনেকেই অসুস্থ। নিয়মিত অক্সিজেন দিতে হয়। আমরা যে কী ভাবে রয়েছি, আমরাই জানি।’’

    একই অবস্থা পাটুলি দমকল কেন্দ্র সংলগ্ন একটি আবাসনেও। এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়েছে সেখানে। যদিও বাসিন্দারা এখনও জলবন্দি। আবাসনের পাম্পঘর এখনও জলের নীচে। ফলে, বাইরে থেকে জল নিয়ে আসতে হচ্ছে আবাসিকদের। তাঁদের এক জন শুভব্রত বিশ্বাস বললেন, ‘‘দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না থাকায় সকালেই এক বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে।’’ পাটুলি থানা ও মুকুন্দপুর সংলগ্ন একাধিক আবাসনেও একই পরিস্থিতি। বিদ্যুৎ, পানীয় জল নেই। থানা সংলগ্ন রাস্তার দু’পাশে হাঁটুজল। স্থানীয় এক আবাসনে ২০০৮ থেকে আছেন ৭৫ বছরের শিবানী দাস। তিনি বলেন, ‘‘আমপান দেখেছি। কিন্তু এই অবস্থা কোনও দিন হয়নি। বাড়িতে শয্যাশায়ী দিদি রয়েছেন। বাইরে বেরিয়ে যে কিছু আনব, সাহস পাচ্ছি না।’’ সিইএসসি-র এগ্‌জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর অভিজিৎ ঘোষ বললেন, ‘‘একাধিক আবাসনের ভিতরে এখনও জল জমে আছে। যত ক্ষণ না জল সরিয়ে পুরসভা ছাড়পত্র দিচ্ছে, তত ক্ষণ গ্রাহক ও কর্মীদের সুরক্ষার কথা ভেবে বিদ্যুৎ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।’’

    অন্য দিকে, সাড়ে চার দশক আগে যা ঘটেছিল, সেই দুর্ভোগ-চিত্রে তেমন হেরফের নেই ম্যান্ডেভিল গার্ডেন্সের ‘পারিজাত’ আবাসনে। দশতলার বাসিন্দা, প্রয়াত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘যত দূর মনে পড়ে, এই বাড়িতে আসার এক বছরের মধ্যে ১৯৭৮-এর বন্যা হয়। তখনও সম্ভবত লিফ্‌ট বসেনি। এ বার লিফ্‌ট থাকলেও নিরাপত্তার জন্য বন্ধ করতে হল। বাড়িতে সাহায্যকারিণীরা আছেন। ছেলে সৌভিক পুজোয় আমার কাছে এসেছে। ওদের সবাইকে অতটা সিঁড়ি ভাঙতে হচ্ছে।’’ ওই বাড়ির বাসিন্দারা জানান, একদা মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পাড়া বলে সামনের রাস্তা অনেকটা উঁচু করা হয়েছে। ফলে, গ্যারাজগুলি বাটির মতো নিচু। প্রায়ই হাঁটুজল জমে। এর মধ্যে গড়িয়াহাটের বৈদ্যুতিক আগুনে পরিস্থিতি জটিল হয়। স্বাতী বলেন, ‘‘ঘণ্টা চারেক বিদ্যুৎ ছিল না। অনেকের তুলনায় কম কষ্ট হলেও সমস্যা সবারই হয়েছে।’’ তখনই লিফ্‌ট বন্ধ করা হয়। বুধবার লিফ্‌ট ঠিক হয়। পাড়ার অন্য দিকের কয়েকটি আবাসনের গ্যারাজে বহু গাড়ি ডুবে বিকল। পুজোর মুখে মাথায় হাত মালিকদের।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)