• আগে স্বাভাবিক জীবন ফেরান, তার পরে তথ্য
    আনন্দবাজার | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • বিভা বসু (জলবন্দি আবাসনের বাসিন্দা)

    সোমবার রাতে যখন প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল, ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। বুঝেছিলাম, রাস্তায় জল জমবে। কিন্তু এমন চরম ভোগান্তি হবে, কল্পনাও করতে পারিনি।

    মঙ্গলবার সকালে জানলা দিয়ে দেখি, বাড়ির সামনে অনিল মৈত্র রোড বর্ষায় ফুলেফেঁপে ওঠা নদী। রাস্তায় একাধিক গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছে। দোতলা থেকে একতলায় কিছুটা নেমে দেখলাম, সিঁড়ির নীচের কয়েকটা ধাপ পর্যন্ত জল। সম্পূর্ণ জলবন্দি আমি। ভোর থেকেই বিদ্যুৎ নেই।

    বুধবার দুপুরেও আবাসনের সামনে হাঁটু সমান জল। অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে গত দু’দিন ধরে। সম্বল বলতে হাতপাখা। গরমে আমার শ্বাসকষ্টের মতো হয়। বয়স ৬০। বুকে পেসমেকার। সারা দিনে বেশ কয়েকটা ওষুধ খেতে হয়। কিছু ওষুধ রাখতে হয় রেফ্রিজারেটরে। সেই ওষুধগুলি হয়তো খারাপই হয়ে গেল। খাবারদাবার তো আগেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

    শুধু খাবারের অভাব নয়, মেপে খেতে হচ্ছে জলও। বাড়ির কাছাকাছি সব দোকানও বন্ধ। আর ছেলেকে জল ভেঙে বাইরে যেতে বলতেও ভয় লাগছে। শুনলাম, মঙ্গলবার শুধু শহরেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আট জন মারা গিয়েছেন। এখানেও জমা জলে যে বিদ্যুতের তার পড়ে নেই, তার নিশ্চয়তা কোথায়? শৌচালয়ের জন্য ব্যবহার করার জলও মেপে খরচ করতে হচ্ছে। কারণ, বিদ্যুৎ না থাকায় বাড়ির ট্যাঙ্কে জল উঠছে না। মনে হচ্ছে বালিগঞ্জ নয়, কোনও প্রত্যন্ত এলাকায় রয়েছি গত দু’দিন ধরে। যেখানে বিদ্যুৎ, পরিস্রুত পানীয় জলের সুবিধা এখনও পৌঁছয়নি। অতি বর্ষণ হয়েছে, এটা মেনে নিয়েও বলছি— পুরসভার, সিইএসসি-র আরও তৎপর হওয়া দরকার ছিল। তা হলে এই ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমত।

    এই পরিস্থিতির মধ্যে বুধবার বিকেলে একটি ফোন এসেছিল। এক জন জানতে চাইলেন আমার নাম ও বয়স। কত নম্বর ওয়ার্ডে থাকি। প্রশ্ন করলে ও-পার থেকে উত্তর এল, বিধানসভা ভোটের জন্য বাসিন্দাদের থেকে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। শুনে রাগ হল। বললাম, “আগে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিন। তার পরে এই সব তথ্য দেব।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)