• ছয় মেট্রোর মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা কলকাতায়! এই সাফল্য মমতার স্লোগানে, বলছে তৃণমূল, তথ্যে কারচুপি, কটাক্ষে বিজেপি
    আনন্দবাজার | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • দেশে যতগুলি মেট্রো শহর রয়েছে, তার মধ্যে ২০২৪ সালে কলকাতাতেই সবচেয়ে কম পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি একটি রিপোর্টে এমনই দাবি করেছে কলকাতা পুলিশ। যদিও লালবাজারের এই রিপোর্টকে তথ্যের কারচুপি বলে কটাক্ষ করেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। পাল্টা শাসক তৃণমূলের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কলকাতা-সহ শহরতলির ট্র্যাফিক ব্যবস্থা সুসংহত করা হয়েছে, এই রিপোর্ট তারই প্রতিফলন। লালবাজারের রিপোর্টে দু’টি ভাগে দুর্ঘটনাকে ভাগ করা হয়েছে। এক, যেগুলিতে মৃত্যু হয়েছে। দুই, যেগুলিতে আহত হয়েছেন মানুষ।

    কলকাতা পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী দিল্লি, মুম্বইয়ের মতো শহরে দুর্ঘটনা, তাতে আহত হওয়া এবং মৃত্যুর যা পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে, সেই তুলনায় কলকাতার সংখ্যা নগণ্য। ২০২৪ সালে কলকাতায় ১৮৮টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৯১ জনের। দিল্লিতে ১,৫০৪টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১,৫৫১ জনের। বেঙ্গালুরুতে ২০২৪ সালে ৮৬৯টি দুর্ঘটনায় ৮৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে ৫৩৪টি দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৫৪৪। মুম্বইয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩৮৪টি। মৃত্যু ৩৭০ জনের। হায়দরাবাদ ২৮৬টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৩০১ জনের।

    কলকাতায় ১,৭৫৪টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১,৭২৪ জন। দিল্লিতে ৫,২২৪টি দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা ৪,১৫৩। বেঙ্গালুরুতে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৪,০২২টি। আহত ৩,৯০০ জন। চেন্নাইয়ে ৩,৮৮৮টি দুর্ঘটনায় জখম হন ৩,২৩৩ জন। মুম্বইয়ে ২,৭২৩টিতে দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা ২,২৫৬। হায়দরাবাদে ৩,৪৯৯ জন জখম হয়েছেন ৩,৩৯৩টি দুর্ঘটনায়।

    লালবাজারের এই পরিসংখ্যানকে তথ্যের কারচুপি বলছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোতে তথ্য পাঠায় না রাজ্য সরকার। তার পর দাবি করে বাংলা নাকি দেশের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ রাজ্য। কিন্তু বাংলার শহর, গ্রাম, মফস্সলের মানুষ জানেন, পাড়ার মোড়ে মোড়ে বিপদ দাঁড়িয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে কারচুপি হয়েছে।’’ শমীকের অভিযোগ, বহু দুর্ঘটনা পুলিশ নথিভুক্তই করে না।

    কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটলে তা কি নথিভুক্ত না-করে অন্য ভাবে সামলানো সম্ভব? কলকাতার পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির বক্তব্য, ছোটখাটো ‘কেসে’ টাকাপয়সা নিয়ে মিটমাট করে নেওয়াটাই পুলিশের রেওয়াজ। পোস্তার একটি পণ্যপরিবহণ সংস্থার কর্ণধার বলেন, ‘‘গত সপ্তাহে আমার একটা ফুল পঞ্জাব ট্রাক সিঙ্গুরে গিয়েছিল আলু আনতে। সেই গাড়িটির আনলোড হওয়ার কথা ছিল পোস্তায়। কিন্তু আসার সময়ে একটি এসইউভি এসে আমার ট্রাকে ধাক্কা মারে। কেসের ভয় দেখিয়ে চালকের কাছে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়। শেষমেশ ফোনে কথা বলে সাড়ে সাত হাজারে রফা করি।’’ পণ্য পরিবহণ সংস্থাগুলির কর্ণধারদের অভিযোগ, এই অন্য ভাবে মিটিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা নেন সিভিক ভলান্টিয়ারেরা।

    বিরোধীদের অভিযোগ প্রত্যাশিত ভাবেই নস্যাৎ করেছে শাসক তৃণমূল। কলকাতা পুরসভার মেয়রপারিষদ সদস্য তথা রাসবিহারীর বিধায়ক দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পথদুর্ঘটনা রুখতেই স্লোগান দিয়েছিলেন ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’। তার যাথাযথ প্রচারও হয়েছে এবং হচ্ছে। ফলে ওই স্লোগান মানুষের মনে গেঁথে গিয়েছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকাশিত রিপোর্টে তারই প্রতিফলন রয়েছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)