দুর্গার সঙ্গেই বাংলার যাত্রাপালার হারিয়ে যাওয়া গৌরবকে আবাহন করছে আরামবাগ পুজো সমিতি। অনেক যত্নে তারা সংগ্রহ করেছে নট্ট কোম্পানির নিলাম হয়ে যাওয়া জেনারেটর, ভারী মাইক, তরবারি এবং বিভিন্ন ‘প্রপস’। মূল মণ্ডপের সামনে সেগুলির প্রদর্শনী। স্বর্ণজয়ন্তীতে পা দেওয়া চিত্তরঞ্জন পার্কের বি ব্লকের পুজোর সোনা এ বার মাটি। ‘মাটি হল খাঁটি’— এই থিমে তাদের পুজোয় রয়েছে অভিনব মৃৎকর্ম। চিত্তরঞ্জন পার্কের পকেট ফর্টি-র নবপল্লী পুজো সমিতির থিম— বাঙালি বিবাহের পুরনো ইতিহাস।
আরামবাগ পুজো সমিতির পক্ষ থেকে অভিজিৎ বসু বলছেন, “চিৎপুর খাঁ খাঁ করছে আজ। পুরনো যাত্রার ইতিহাস আর কৌলিন্যকথাকে উদ্ধার করে পৌঁছে দিচ্ছি দিল্লির বাঙালির কাছে। মণ্ডপ জুড়ে থাকবে পুরনো যাত্রার পোস্টার। যাত্রার আদলে মঞ্চ হচ্ছে। মাইকে বাজবে অতীতের পালার গান। পুরনো দিনের ৪০০ গামছায় সাজানো হবে বহিরঙ্গ।”
বি ব্লকের পুজোর বিষয়-চিন্তক দম্পতি মনোজ এবং শিপ্রা দেব। মনোজ বলছেন, “মাটিতেই ফলে সোনার ফসল, মাটিতেই জন্ম নেন সোনার মানুষ। আমরা মিশে যাই মাটিতে। সমাজের ন’পর্যায়ের মাটি নিয়ে তৈরি হয় মায়ের মূর্তি। তাই আমাদের লোগো— মাটির থালা। পঞ্চাশ হাজার মাটির প্রদীপ থাকবে মণ্ডপে। প্যান্ডেলের চাল হবে টেরাকোটার। ভোগ দেওয়া হবে মাটির থালা-গ্লাসে।”
নবপল্লি পুজো কমিটির পক্ষ থেকে সুমন চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “ঐতিহ্যবাহী বাঙালি বিবাহের রীতিনীতি ও সাজসজ্জা প্রতিফলিত আমাদের দুর্গা পুজার মণ্ডপে। প্রধান শিল্পী আশিস রঞ্জন দাস ও তাঁর সহযোগী প্রবাল বসু ও শম্ভু সাহা তৈরি করছেন এই মণ্ডপ। গায়ে হলুদ, সিঁদুরদান, মালা বদল, সাত পাক, শুভ দৃষ্টি, কনকাঞ্জলি প্রতিফলিত হবে মণ্ডপে।” সমিতির কথায়, বাঙালি বিবাহের ইতিহাস বাংলার পারিবারিক জীবনকেও তুলে আনে। পুজোয় থাকছে সে সবেরই প্রদর্শনী।
দিল্লির রামকৃষ্ণ মিশনের পুজো নিজেই এক ‘থিম’। মিশনের সচিব স্বামী সর্বলোকানন্দের কথায়, “নয়াদিল্লির রামকৃষ্ণ মিশন মানবজাতির সেবা করে চলেছে গত ৯৮ বছর ধরে। তবে প্রতিমা করে দুর্গা পুজো এখানে শুরু হয়েছে ২০২৩ সাল থেকে। এ বারে তাই তৃতীয় পুজো। আশা করছি, গড়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের পা এখানে পড়বে পুজোয়। সকালের পুজো এবং পুষ্পাঞ্জলির পাশাপাশি প্রত্যেক সন্ধ্যায় আরতি হবে। যাঁরা আসবেন, তাঁদের ভোগ-প্রসাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
নির্দিষ্ট থিমের বাইরেও রয়েছে আবাসনের নিজস্ব পুজো, যা সাবেকি বাড়ির পুজোরই এক সম্প্রসারিত প্রবাসী রূপ। ইস্ট এন্ড অ্যাপার্টমেন্টের পুজোর মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে ব্রিটেনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হলের আদলে। নিউ অশোক নগর মেট্রো স্টেশনের ঠিক গায়ে এই আবাসনের পুজোয় সপ্তমী থেকে নবমী প্রসাদ পাবেন গড়ে প্রায় তিন হাজার জন।