দেবী দুর্গার আগমন এ বছর গজে, যা শস্যশ্যামলা পৃথিবীর প্রতীক, প্রাচুর্য ও আশার বার্তা। আবার তাঁর গমন দোলায়, যা অশুভ বলেই করেন শাস্ত্রজ্ঞেরা। আনন্দ ও অনিশ্চয়তার এই সূক্ষ্ম দোলাচলের মধ্যেই লন্ডনের বাঙালি সমাজের মনে আজ উচ্ছ্বাস, ভক্তি আর এক গভীর আত্মীয়তার অনুভূতি। মা আসছেন।
লন্ডনের প্রাচীনতম দুর্গোৎসব, হ্যাম্পস্টেড পুজো এ বছর ষাট বছরে পদার্পণ করছে। ষাট বছরের ইতিহাস মানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকে থাকা ঐতিহ্য, ভক্তির অটল ধারা। হ্যাম্পস্টেড টাউন হলের আঙিনায় দেবীর প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে যে কেউ অনুভব করবেন এখানে শুধু পুজো নয়, আছে বাংলার এক অমূল্য উত্তরাধিকার। প্রতিমার শৈল্পিক কারুকার্য, ভোগের সুবাস আর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার গান-নৃত্যে ভরে ওঠে এক টুকরো কলকাতা। ষাটতম বর্ষপূর্তির এই আয়োজনে প্রতিশ্রুত রয়েছে আরও রঙিন সন্ধ্যা, আন্তরিক মিলনমেলা যা নবীন প্রজন্মকে ঐতিহ্যের হাত ধরে এগিয়েনিয়ে যাবে।
অন্য দিকে, পশ্চিম লন্ডনের ইলিং-এ গানার্সবেরি পার্ক স্পোর্টস হাবে লন্ডন শারদ উৎসব, বেঙ্গল হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে, প্রবাসী জীবনে আনে এক অন্য স্বাদ। ভক্তদের জন্য প্রতিদিনের অঞ্জলি, সন্ধ্যার আরতি ও প্রসাদের ব্যবস্থা থাকবে। পুজোমণ্ডপে উপস্থিত থেকে প্রবাসী বাঙালিরা যেমন ভক্তি আর আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া অনুভব করবেন, তেমনি সপরিবার এই উৎসবে আসা প্রত্যেকের জন্য থাকবে উৎসবের আবহ। পুজো উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রবাসী শিল্পী থেকে শুরু করে অতিথি শিল্পীরাও। উৎসব প্রাঙ্গণে শিশুদের জন্য খেলাধুলোর আয়োজন, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা এবং ভক্তদের জন্য ভোগ বিতরণ থাকবে, যা উৎসবকে দেবে এক পূর্ণতা।
লন্ডনের শেফার্ডস বুশে অবস্থিত ভারত সেবাশ্রম সংঘ এ বছরও তাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী আচার-অনুষ্ঠান মেনে দুর্গাপুজোর আয়োজন করছে। প্রতিদিনের পুজো, অঞ্জলি, সন্ধ্যারতি ও মহাপ্রসাদের সঙ্গে মহাষ্টমীর সন্ধিপুজো বিশেষ গুরুত্ব পায়। আশ্রমভিত্তিক এই পুজো শুধু ধর্মীয় আচারেই সীমাবদ্ধ নয়, সমাজসেবার মনোভাবও প্রতিফলিত করে যা লন্ডনের প্রবাসী জীবনে এক অনন্য মাত্রা যোগ করে।
উত্তর লন্ডনের নর্থ লন্ডন প্রভাতী সংঘ দীর্ঘদিন ধরে দুর্গোৎসবের আয়োজন করে আসছে। এদের পুজো শুধু ভক্তির নয়, সংস্কৃতিরও এক সমারোহ। বিশেষ আকর্ষণ হলো শ্রীহট্টের নারীদের পরিবেশিত ধামাইল গান, যা ভক্তি আর আনন্দকে একসঙ্গে মিশিয়ে দেয়। পরিবারের মিলন, অঞ্জলি, আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে এই আঞ্চলিক ঐতিহ্য লন্ডনের দুর্গোৎসবকে আরও রঙিনকরে তোলে।
২০২৫ সালের লন্ডনের এই পুজোগুলি প্রমাণ করবে আবারও ভৌগোলিক দূরত্ব যতই দীর্ঘ হোক না কেন, প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে ভক্তির টান, সংস্কৃতির বন্ধন অটুট। দেবী দুর্গার আগমনে ধূপের গন্ধ, ঢাকের আওয়াজ আর মন্ত্রোচ্চারণে লন্ডনের ব্যস্ত শহরও যেন কিছু দিনের জন্য রূপ নেবে বাংলার উৎসবমুখর আঙিনায়।