নেকড়ে আতঙ্কে ত্রস্ত এই গ্রাম! দিন-রাত জুড়ে হামলা, গ্রামজুড়ে ভয়ের আবহ...
আজকাল | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের বাহরাইচ জেলায় ফের নেকড়ের সন্ত্রাসে কেঁপে উঠেছে গ্রামীণ জনপদ। রাতে হামলার পাশাপাশি এখন দিনের আলোতেও শিকার ধরতে গ্রামে ঢুকে পড়ছে নেকড়েরা। ভয়ে অনেকে ঘরের বাইরে বেরোতে সাহস পাচ্ছেন না, ফলে স্বাভাবিক জীবন কার্যত বিপর্যস্ত।
বুধবার রাতে বাবা পাতাও গ্রামে দুই-দুই বছরের কন্যা সোনিকে মায়ের সামনেই টেনে নিয়ে যায় একটি নেকড়ে। পরে তাকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হলেও চিকিৎসার সময় শিশুটি মারা যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে পাশের মাঞ্জহারা তৌকালি গান্ডুঝালা গ্রামে একটি নেকড়ে দিনের আলোয় হামলা চালিয়ে একটি বাছুরকে মেরে ফেলে।
স্থানীয় গ্রামবাসী রাম বালক অভিযোগ করে বলেন, “আমরা আগেই বনবিভাগকে খবর দিয়েছিলাম যে নেকড়ে ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু তারা কিছু করেনি। এখন নিজেরাই আমরা তিনটি দলে ভাগ হয়ে লাঠি-ভালা নিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করেছি। তবু ভয় যাচ্ছে না।”
মঙ্গলবার বিকেলে কাইসারগঞ্জে তিন বছরের প্রিন্সকে মাঠের দিকে টেনে নিয়ে যায় একটি নেকড়ে। গ্রামবাসীরা প্রাণপণ চেষ্টা করে শিশুটিকে বাঁচাতে সক্ষম হলেও গুরুতর জখম অবস্থায় সে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি। প্রিন্সের বাবা শোভারাম জানান, “আগে শুধু রাতে নেকড়ে আসত। এখন দিনের বেলাতেও হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ছে। ওরা ক্রমশ সাহসী হয়ে উঠছে।”
এই ঘটনার সময় প্রিন্সকে বাঁচাতে গিয়ে অন্তত সাতজন গ্রামবাসী জখম হয়েছেন, যারা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শোভারামের ভাষায়, “এখন সর্বত্র আতঙ্ক। মানুষ মাঠে কাজ করতে যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে।” গত জুন থেকে এ পর্যন্ত নেকড়ের হামলায় অন্তত ছয়টি শিশু নিহত হয়েছে। প্রায় এক ডজন গরু, বাছুর ও ছাগল মারা গেছে। আহত হয়েছে ২০ জনেরও বেশি গ্রামবাসী।
কাতারনিয়াঘাট বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য থেকে পথভ্রষ্ট নেকড়ের দল গ্রামে ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বনবিভাগের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (ডিএফও) রাম সিং যাদব। তিনি বলেন, “আমরা ৩২টি দল গঠন করেছি নেকড়েদের ধরার জন্য। নেকড়ে অত্যন্ত ধূর্ত প্রাণী, তবে আমরা আশা করছি দ্রুত তাদের ধরতে সক্ষম হব।”
উল্লেখ্য, গত বছরও একই এলাকায় ছয়টি নেকড়ে অন্তত ১০ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করেছিল। বনবিভাগ তখন পাঁচটি নেকড়েকে জীবিত ধরতে সক্ষম হয়েছিল, আর একটি গুরুতর জখম হয়ে মারা যায়। এবারের পুনরাবৃত্ত ঘটনায় গ্রামীণ মহলে আতঙ্ক চরমে পৌঁছেছে। প্রশাসন ও বনবিভাগের তৎপরতা সত্ত্বেও গ্রামের মানুষ এখন দিন-রাত ঘরবন্দি, ভয়ে কাঁপছে বাহরাইচের অজস্র পরিবার।