• পুজোর সময় প্রসূতি ও শিশু বিভাগে বিশেষ নজর, অন্যথায় কড়া পদক্ষেপ
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • পুজোতেও ছুটি নেই চিকিৎসকদের। বিশেষ করে প্রসূতি ও শিশু বিভাগে কোন রকম অযত্ন বা চিকিৎসার অভাব যাতে না ঘটে তার জন্য কড়া নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর। পুজোর সময় প্রতিটি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, কলকাতা-সহ জেলাগুলিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চিকিৎসক বা স্থাস্থ্যকর্মীদের অনুপস্থিতিতে যদি প্রসূতি মা ও সদ্যোজাত শিশুদের কোনওরকম বড় অঘটন বা মৃত্যু ঘটে, তবে তা বরদাস্ত করবে না রাজ্য সরকার ও স্বাস্থ্য দপ্তর। এই নির্দেশ দিয়ে নোটিস জারি করা হয়েছে রাজ্যে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে।

    স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশে পুজোর সময় সমস্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য বিশেষ রোস্টার তৈরি করা হয়েছে। ষষ্ঠীর দিন রবিবার হওয়ায় সেদিন অন্যান্য রবিবারের মতোই সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আউটডোর পরিষেবা বন্ধ থাকবে। অষ্টমীর দিনও বন্ধ থাকবে আউটডোর পরিষেবা। পুজোর সময় এই ২ দিন ছাড়া বাকি দিনগুলিতে আউটডোর পরিষেবা চালু থাকবে বলে জানা গিয়েছে। জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা চালু থাকবে এবং তার জন্য এমার্জেন্সি তথা জরুরি বিভাগ ও রোগ পরীক্ষার বিভাগগুলি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হবে।


    সক্রিয় থাকবে স্বাস্থ্য ভবনের কন্ট্রোল রুমও।

    স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে জারি করা হয়েছে ১১ দফা নির্দেশিকা। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের অনুপস্থিতিতে এবং চিকিৎসায় গাফিলতির ফলে যদি প্রসূতি মা বা শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, তবে দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে চিকিৎসকদের। ছাড় পাবেন না সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানরাও।

    নির্দেশিকায় যা যা বলা হয়েছে : ১. বিশেষজ্ঞের মতামত দিতে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে শারীরিকভাবে ২৪ ঘণ্টা উপস্থিতি দেখাতে হবে সহকারী অধ্যাপক পদ মর্যাদার একজন চিকিৎসককে। জেলা হাসপাতালগুলিতে উপস্থিত থাকতে হবে সিনিয়র স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞকে। ২. সিজার অপারেশন হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে উপস্থিত থাকতে হবে। জেলা হাসপাতালের ক্ষেত্রে মেডিক্যাল অফিসারকে উপস্থিত থাকতে হবে। ৩. পুজোর সময় স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ, অ্যানেসথেসিওলজিস্ট চিকিৎসককে উপস্থিত থাকতে হবে। যাঁরা উপস্থিত থাকবেন তাঁদের নাম, মোবাইল নম্বর-সহ ২ মাসের ডিউটি রোস্টার আগে থেকেই জমা দিতে হবে স্বাস্থ্য ভবনকে। ৪. পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ তথা পিপিপি মডেলে চলা হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলি ২৪ ঘন্টা খোলা রাখতে হবে।

    ৫. রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,পুজোর সময় তাঁরা কন্ট্রোল রুম থেকে গোটা পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন। ৬. শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের প্রতিনিয়ত এসএনসিইউ-তে নজর রাখতে হবে। ৭. অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখতে হবে। ৮. রক্তের সংকট মেটাতে পুজোতেও খোলা রাখতে হবে ব্লাড ব্যাঙ্ক। ৯. জীবনদায়ী ওষুধ, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের যোগান রাখতে হবে। ১০. নির্দেশিকার অন্যথা বা অনিয়ম ঘটলে শাস্তি হতে পারে চিকিৎসকদের। ১১. প্রয়োজনে হাসপাতালের উপাধ্যক্ষরা হাসপাতাল পরিদর্শনে যাবেন এবং পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। স্বাস্থ্য ভবন এও জানিয়েছে যে,ডাক পাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে চিকিৎসকদের হাজির হতে হবে ।

    রাজ্যের প্রত্যেকটি মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের পুজোর ছুটির ৩ সপ্তাহ আগেই চিঠি দিয়ে সমস্ত নির্দেশাবলী জানিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। ছুটি থাকলেও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও অ্যানেস্থেসিওলজিস্টরা বিদেশ ভ্রমণে বা দীর্ঘ সময়ের জন্য এলাকা ছেড়ে যেতে পারবেন না বলে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। প্রতিটি হাসপাতালকে প্রসূতি ও শিশুদের নিরাপত্তায় সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)