• অভিযোগ থেকে মুক্তির পর কর্নেল পদে প্রমোশন পেলেন প্রসাদ পুরোহিত...
    আজকাল | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতীয় সেনার লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্রসাদ পুরোহিতকে কর্নেল পদে উন্নীত করা হয়েছে। গত জুলাই মাসে বিশেষ এনআইএ আদালত পুরোহিত-সহ সাতজনকে বেকসুর খালাস দেয়। আর সেই রায় ঘোষণার অল্প সময়ের মধ্যেই এই প্রমোশনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক।

    মুম্বইয়ের বিশেষ বিচারপতি একে লাহোটি রায় ঘোষণার সময় বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে গুরুতর সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু আইন অনুসারে শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকায় তাদের দোষী সাব্যস্ত করা সম্ভব হয়নি।” এই যুক্তির ভিত্তিতেই সাতজন অভিযুক্তকে খালাস দেওয়া হয়। তবে আদালত এ-ও স্পষ্ট করে দেয় যে, এই খালাস মানেই নির্দোষ প্রমাণ নয়, বরং আইনি সুবিধার কারণে অভিযুক্তরা ‘benefit of doubt’ পেয়েছেন।

    জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) প্রথমে জানিয়েছিল তারা বোম্বে হাই কোর্টে আপিল করার বিষয়ে আইনি মতামত নেবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। অন্যদিকে, বিস্ফোরণে নিহত ছয়জনের পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যেই খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছেন।

    প্রসাদ পুরোহিতের স্ত্রী অপর্ণা পুরোহিত সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন যে সেনাবাহিনী তাঁকে কর্নেল পদে উন্নীত করেছে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং তাঁর শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখেন— “অভিনন্দন কর্নেল পুরোহিত। দেশপ্রেমিক সেনাদের পাশে দৃঢ়ভাবে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।” এই পদোন্নতিকে অনেকেই সরকারের পক্ষ থেকে একটি রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখছেন, যেখানে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সন্ত্রাসের অভিযোগে অভিযুক্ত একজন সেনা অফিসারকে পূর্ণ সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া হলো।

    ২০০৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের মালেগাঁও শহরের ভিক্কু চকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন। প্রথমে স্থানীয় থানায় এফআইআর দায়ের করা হয় এবং মহারাষ্ট্র অ্যান্টি-টেররিজম স্কোয়াড (এটিএস) তদন্তের দায়িত্ব নেয়। তখনকার এটিএস প্রধান হেমন্ত করকরে (যিনি ২৬/১১ মুম্বই হামলায় নিহত হন) তদন্তের নেতৃত্ব দেন।

    এটিএস অভিযোগ তোলে যে, প্রসাদ পুরোহিত ২০০৬ সালে “অভিনব ভারত” নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে তহবিল জোগাড় করে হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল, সংগঠনের নিজস্ব সংবিধান, পতাকা এবং এমনকি বিদেশে নির্বাসিত সরকার গঠনের ছক কষা হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকার চালানোর জায়গা হিসেবে ইজরায়েল অথবা থাইল্যান্ডকে বেছে নেওয়ার কথাও উঠে আসে তদন্তে।

    প্রথমে মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অব অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যাক্ট (মকোকা)-এর আওতায় মামলা দায়ের করা হলেও পরে তা খারিজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে পুরোহিত-সহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ (Unlawful Activities Prevention Act), বিস্ফোরক আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় বিচার চলে।

    প্রথমে মোট ১২ জনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে অনেকে প্রায় নয় বছর জেল খাটেন। ২০১৬ সালে এনআইএ সম্পূরক চার্জশিটে ছ’জনকে বাদ দেয়, যাঁদের মধ্যে বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরও ছিলেন। যদিও আদালত পরে তাঁকে পুরোপুরি মুক্তি দেয়নি এবং বিচার চলতে থাকে।

    পুরোহিতের প্রমোশনকে বিজেপি নেতৃত্ব ‘দেশপ্রেমিক সেনার মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া’ হিসেবে দেখাচ্ছে। তবে সমালোচকদের মতে, এটি সরকারের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত একজন সেনা অফিসারকে রেহাই দেওয়ার মতো বার্তা। নিহতদের পরিবারও প্রশ্ন তুলেছে, “প্রমাণের অভাবে খালাস মানেই কি নির্দোষ প্রমাণ? তাহলে আমাদের প্রিয়জনদের মৃত্যুর দায় নেবে কে?” ১৭ বছর ধরে টেনে চলা এই মামলা, অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ এবং অবশেষে সরকার-সমর্থিত প্রমোশনের ঘটনাটি ভারতীয় বিচারব্যবস্থা, রাজনীতি ও সেনাবাহিনীর সম্পর্ককে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে।
  • Link to this news (আজকাল)